কলকাতা: স্কুলে পড়তে পড়তে অনেকেই এনসিসি (NCC) শিবিরে যোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু জানেন কি কেন গড়ে তোলা হয়েছিল এনসিসি বা ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পস? আসলে খুব ছোট থেকেই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে দেশাত্মবোধ তৈরি করার লক্ষ্যে এনসিসি তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এনসিসি এবার ধাক্কা খেল পশ্চিমবঙ্গে। অভিযোগ, এনসিসি-র জন্য অনুদান দিচ্ছে না রাজ্য সরকার৷ চলুন দেখে নিই এই এনসিসি আসলে? এই কোর্স করলেই বা কী লাভ হয়?
আরও পড়ুন- খাদ্য দফতরের অস্থায়ী কর্মী, মানিক পুত্র সৌরভের মাসিক বেতন শুনলে চোখ কপালে উঠবে
১৯৫০ সালে আমাদের দেশে তৈরি হয় এনসিসি। যার সিলেবাস তৈরি করেছিলেন খোদ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু৷ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ তো বটেই, যুক্ত হয়েছিল নৌসেনা ও বায়ুসেনার প্রশিক্ষণও। পাশাপাশি এনসিসি-র মাধ্যমে সামাজিক কাজকর্মের শিক্ষাও দেওয়া হয় ক্যাডেটদের।
স্কুল বা কলেজে এই কোর্স ছিল ঐচ্ছিক৷ ইচ্ছে হলে পড়ুয়ারা এই কোর্স করতে পারতেন৷ তবে ১৯৬২-তে ভারত-চিন যুদ্ধের পর এনসিসি প্রশিক্ষণ সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে পড়ুয়াদের এনসিসি প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এখন তা আর বাধ্যতামূলক নয়৷
সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এনসিসি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে কোনও স্কুলে সেই সুযোগ না থাকলেও প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে৷ সেক্ষেত্রে কোনও এনসিসি ইউনিটের কমান্ডিং অফিসারের কাছে আবেদন জানাতে হবে। স্কুলের পাঠ শেষ করার পর কলেজেও এনসিসি কোর্স করা যায়। সে ক্ষেত্রে ‘বি’ ও ‘সি’ সার্টিফিকেট পেতে পারেন পড়ুয়ারা। তবে পশ্চিমবঙ্গে এনসিসি শিবির বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘বি’ ও ‘সি’ সার্টিফিকেট পেতে অসুবিধা হতে পারে ক্যাডেটদের।
‘বি’ সার্টিফিকেট পেতে গেলে প্রশিক্ষণের সময় ৭৫ শতাংশ হাজিরা থাকা বাধ্যতামূলক৷ প্রশিক্ষণ চলবে ১৮ মাস৷ প্রশিক্ষণ শেষে এই সার্টিফিকেটের জন্য পরীক্ষা দেওয়া যাবে। আগে ‘এ’ সার্টিফিকেট থেকে থাকলে ১০ নম্বর বাড়তি যোগ হবে৷ ‘সি’ প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ‘বি’ সার্টিফিকেট লাগবে। তিন বছরের প্রশিক্ষণ পর্বে অন্তত ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
এনসিসি-তে কেমন ট্রেনিং দেওয়া হয়?
এখানে সেনাবাহিনীর মতোই প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে পড়ুয়ারা। হাতে ধরে শেখানো হয় ছোট অস্ত্রের ব্যবহারও৷ ট্রেনিং ক্যাম্পে শেখানো হয়, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করার কৌশল৷ যুদ্ধ বা শৃঙ্খলার পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি ট্রেকিং, প্যারাসেলিং, স্কুবা ডাইভিং, ক্যামেল সাফারিও শেখানো হয় পড়ুয়াদের।
পড়ুয়াদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থাও রয়েছে। এর জন্য অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে ৬৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে৷ দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে কলা বিভাগে ৫৫ শতাংশ, বিজ্ঞান বিভাগে ৬৫ শতাংশ ও বাণিজ্য বিভাগে ৬০ শতাংশ নম্বর থাকলে ওই পড়ুয়া স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্য হবে৷
এনসিসি ক্যাডেটরা কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন?
এনসিসি ক্যাডেটদের জন্য দেরাদুনে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ৬৪ টি এবং চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে ১০০ টি আসন সংরক্ষিত থাকে৷ এছাড়াও ইন্ডিয়ান নাভাল অ্যাকাডেমিতে প্রতি কোর্সে ৬ টি করে এবং এয়ার ফোর্স অ্যাকাডেমির প্রতি কোর্সে ১০ শতাংশ আসন নসিসি ক্যাডেটদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এনসিসি সার্টিফিকেটের উপর অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়ে থাকে। দেশের অনেক বড় সংস্থাও এনসিসি-র সি সার্টিফিকেট প্রাপ্ত প্রার্থীদের চাকরি দিয়ে থাকে। পুলিশ বা প্যারামিলিটারি ফোর্সে চাকরির ক্ষেত্রেও এনসিসি ক্যাডেটরা বোনাস নম্বর পেয়ে থাকেন।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>