আঁধার ঘনালেই ভূতের আখড়া হাই কোর্ট, ১১ নম্বর ঘরে লুকিয়ে অজানা রহস্য

আঁধার ঘনালেই ভূতের আখড়া হাই কোর্ট, ১১ নম্বর ঘরে লুকিয়ে অজানা রহস্য

3b20cfebefaddb5c919bd89af4b9fe53

কলকাতা:  কে যেন দাঁড়িয়ে ওই খানে৷ ধরা দিয়েও দেয় না ধরা৷ শুধু পিঠের শিড়দাড়া বেয়ে নেমে যায় এক ঠাণ্ডা স্রোত৷ রাতের অন্ধকার নামলেই গা ছমছম করে ওঠে৷ কলকাতা হাইকোর্টের ১১ নম্বর ঘরে যে তেনাদের আখড়া৷ রাত নামলেই এখানে ঘিরে ধরে এক অজানা রহস্য৷

 

 

 

আরও পড়ুন- পর্ষদকে আরও নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের, ইন্টারভিউ নিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে

 

হাইকোর্টের এই ১১ নম্বর ঘরে ভূতের সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে বেশ অনেকেরই৷ এখানে পাহাড়ারত এক পুলিশকর্মী তাঁদের মধ্যে একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই হাড় হিম হয়ে যায়৷ এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য৷ ঘোর কাটতেই বুঝতে পারি, আমার সামনে ভূত বসে রয়েছে!’’ লোকে বলে ভূতের বাসা সেখানেই, যেখানে মনের অন্ধকার। কিন্তু মনে আঁধার তো আর অযথা ঘনায় না। তার পিছনে থাকে কোনও না কোনও কাহিনি৷ সেই সব কাহিনি জুড়ে থাকে ‘অতৃপ্ত আত্মা’র অন্ধকার ছায়া। লুকিয়ে থাকে অলৌকিক কোনও কাহিনি৷ 

পোড়ো বাড়ি থেকে পুরনো হাভেলি, কিংবা জীর্ণ হোটেল, জঙ্গল, পাহাড়,শ্মশান, তাদের বড্ড প্রিয় জায়গা৷ আবার অজ গ্রাম থেকে লন্ডনের আলো ঝলমলে প্রাসাদ, সর্বত্রই দেখা মেলে তেনাদের৷ তারা রয়েছে খাস কলকাতার বুকেও। এই শহরের একাধিক ভুতুড়ে বাড়ি রয়েছে। তা প্রা৷ কমবেশি সকলেরই জানা। তবে জমাটি আড্ডার মজলিস বোধহয় কলকাতা হাই কোর্টের এই ১১ নম্বর ঘরে৷ এই লাল বাড়ির চারদেওয়ালের অন্দরে লেখা রয়েছে না জানি কত কাহিনি৷ কেউ দণ্ডিত হয়েছে বড়সড় কোনও অপরাধে, কারও জন্য লেখা হয়েছে ফাঁসির সাজা। এমন এক জায়গায় যদি ভূত থেকেই থাকে,  তাহলে অবাক হওয়ার বোধহয় কিছু নেই৷  কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী থেকে সাফাইকর্মী, প্রায় সকলের মুখেই শোনা যায় নানা ভুতুড়ে কাহিনি।

ভারতের সবচেয়ে পুরনো হাই কোর্ট রয়েছে কলকাতায়৷ যা তৈরি করা হয়েছে বেলজিয়ামের ক্লোথ হলের কায়দায়৷ অসাধারণ  স্থাপত্যের জন্যই এই ভবন ঐতিহ্যবাহী বাড়ি বা হেরিটেজ বিল্ডিং-র তকমা পেয়েছে। প্রতিদিন এখানে প্রচুর মানুষ আসেন সুবিচারের আশায়। সারা দিন অসংখ্য লোকের ভিড়৷ কিন্তু সন্ধ্যের ঘানাতেই নিশুতি হাই কোর্ট পাড়া। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে গোটা বাড়ি ঘিরে ধরে এক নিস্তব্ধতা। উঁচু উঁচু পাচিল থেকে নেমে আসে হাড় হিম করা শীতল স্রোত৷  

রাতের অন্ধকারে থমথমে এই বাড়িতে  হলিউডের কোনও ‘হরর’ ছবির চেয়ে কম থ্রিলার নেই। এমন গা ছমছমে আবহ কলকাতার খুব কম বাড়িতেই রয়েছে। তাই হয়তো কলকাতার ভুতুড়ে বাড়ির তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট৷ 

কলকাতা হাই কোর্টে যে ভুতের উৎপাত রয়েছে সে বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ সেদিন তাঁর এজলাসে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইনজীবী রাতুল বিশ্বাস। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, একদিন রাতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসে হাইকোর্টের একজন পুলিশ কর্মী জানান তাঁকে পিছন থেকে একজন ধাক্কা মারে৷ এর পরেই এগারো নম্বর কোর্টের পাশে যে সিঁড়ি পথ রয়েছে, রাত হলেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ শুধু তাই নয় সেখানে পুলিশকর্মীর সংখ্যাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বন্দুক হাতে তেনাদের মোকাবিলা করা যায় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আজও রয়েছে৷