কলকাতা: বাড়ির বয়স্করা বলে থাকেন, বাচ্চারা একটু দুষ্টুমি না করলে ভালো লাগে না৷ তাঁদের কাছে এটাই বাচ্চাদের সুস্থ থাকার পরীক্ষা৷ তা বলে মাত্রাছাড়া দুরন্তপনা! এক এক সময় বাচ্চাদের দুষ্টুমি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়৷ বাড়ির গণ্ডি ছাড়িয়ে তারা একই ভাবে দুষ্টুমি শুরু করে দেয় স্কুলেও৷ তাদের সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের৷ ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ দুরন্ত বাচ্চারই কিন্তু ঘুম অত্যন্ত কম৷ বা বলা যায়, রাতে তাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না৷ কিন্তু এর কারণ কী?
আরও পড়ুন- Mediclaim আছে? স্বাস্থ্যবিমা দাবি করার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখুন
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রত্যেকের শরীর একটি নির্দিষ্ট ঘড়ি ধরে চলে। যার জেরে নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদের ঘুম পায়, খিদে পায়, আবার ঘুম ভেঙেও যায়৷ মানব দেহের এই ঘড়িকে বলে ‘সারকাডিয়ান ক্লক’। কারও ক্ষেত্রে এই ঘড়ি দেরিতে চলে। সেই কারণেই তাঁরা বাকিদের থেকে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে৷ সেটা বুঝতে পারেন না তাদের মা-বাবারা। ভাবেন ছোট্ট সোনাটা হয়ত ইচ্ছে করে শুয়ে আছে। আর এমন খুদেকে মর্নিং স্কুলে ভরতি করা হলে আর রক্ষে নেই৷ ভাবছেন তো ঘুমের সঙ্গে স্কুলের কী সম্পর্ক?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিক মতো ঘুম না হলে দিনের বেলায় বড়দের ঝিমুনি ধরে। ছোটদের ক্ষেত্রে হয় এর ঠিক উল্টোটা। ওরা অনেক বেশি হাইপার অ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে। ঠিক মতো পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না৷ তাই স্কুল থেকে আসতে থাকে ভূরি ভূরি অভিযোগ। নয় সে এটা-ওটা ভাঙছে, নয়তো পড়ায় মন দিচ্ছে না৷ এটি একটি সমস্যা৷ চিকিৎসা পরিভাষায় এই অসুখের নাম অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভ ডিজঅর্ডার। দেখা গিয়েছে, এডিএইচডি-তে আক্রান্তদের ৫০ শতাংশেরই রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। পলিসমনোগ্রাফি টেস্টে এই বিষয়টি ধরা পড়েছে৷
শিশুদের কিন্তু আরও অনেক সমস্যা রয়েছে৷ অসংখ্যর শিশু মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। মায়েরা তখন ভাবেন খুদের বুঝি খিদে পেয়েছে। কিন্তু, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দেব রায় বলছেন, ছ’মাস বয়স পর্যন্ত এই সমস্যা থাকতে পারে। তবে দু’তিন বছরের শিশু যদি বার বার ঘুম থেকে উঠে পড়ে তাহলে সেটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। এমন শিশুকে নিয়ে মা-বাবা যখনই চিকিৎসকের কাছে আসেন, তখন সবার আগে জিজ্ঞেস করতে হবে, নাক ডাকে কি? কারণ, রাতে নাক ডাকা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এটি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যা্পনিয়ার প্রথম ধাপ৷ ডা. অলোকগোপাল ঘোষাল জানান, অসংখ্য শিশু রয়েছে, যারা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত। ঘুমের সময় এদের গলা এবং উপরের শ্বাসনালির পেশীগুলি শিথিল হয়ে যায়, যা শ্বাসনালি বন্ধ করে দেয়৷ আর তখনই নাক ডাকে খুদে। হাঁ করে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শুভাশিস রায় জানান, হাঁ করে শ্বাস নিলে নানা বিপত্তি ঘটে। টানা পাঁচ-সাত বছর ওইভাবে দম নিতে নিতে বদলে যেতে পারে ঠোঁটের গড়ন। ঊর্ধ্বওষ্ঠ উপরের দিকে উঠে খানিকটা ত্রিভুজাকৃতি হয়ে যায়। তাছাড়া, সরকারি-বেসরকারি কোনও স্বাস্থ্য বিমাতেই এই অসুখের চিকিৎসা হয় না। যা নিশ্চিত ভাবেই চিন্তার৷
ঘুম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া কিন্তু বিপজ্জনক। এর থেকে শরীরে বাসা বাঁধে মারণ রোগ। সাধারণত পলিসমনোগ্রাফি টেস্টের মাধ্যমে এই অসুখ ধরা পড়ে। তবে বাড়াবাড়ি হলে সিপ্যাপ মেশিনের সাহায্য নিতে হয়। যার দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। পাঁচ-সাত বছর এই মেশিন চলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে এই রোগের চিকিৎসা বিমার আওতায় আনা উচিত৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>