নয়াদিল্লি: ভারতীয় রেলের দীর্ঘ ইতিহাসে লুকিয়ে রয়েছে বহু অজানা কাহিনী৷ যা আমাদের সত্যই চকিত করে৷ কখনও স্টেশন ঘিরে রহস্যের জাল, কখনও আবার ট্রেনের সঙ্গে লেপ্টে থাকা অদ্ভূত গল্প৷ তবে ট্রেনে উঠতে গেলে টিকিট আপনাকে কাটতেই হবে৷ সেটাই দস্তুর৷ বিনা টিকিটে ট্রেনে সফর করলেই দিতে হবে জরিমানা৷ অনেক ক্ষেত্রে হাজতবসাও করতে হয়। কিন্তু জানেন কি, আমাদের দেশে এমন একটি ট্রেন রয়েছে, যেখানে আপনি বিনামূল্যে সফর করতে পারবেন? এর জন্য একটা টাকাও দিতে হবে না আপনাকে।
আরও পড়ুন- ‘অস্বাভাবিক’ তুষারপাত সিকিমে, ১৪০০ পর্যটককে উদ্ধার, ভেঙেছে রাস্তাও
অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন তো, এমনটাও আবার হয় নাকি? বিশ্বাস করা কঠিন হলেও, এটাই সত্যি। ভাকরা রেলওয়ে ট্রেনের যাত্রীরা ৭৩ বছর ধরে বিনামূল্যেই ট্রেন সফর করছেন।
কোথায় চলে এই ট্রেন?
এই বিশেষ ট্রেনটি চলাচল করে পঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশ সীমান্তে৷ এখানে নাঙ্গল এবং ভাখারের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন স্থানীয়রা। এই ট্রেনে ভ্রমণের জন্য টিকিট বুকিং নিয়েও যাত্রীদের চিন্তা করতে হয় না।
কবে থেকে যাত্রা শুরু?
জানা গিয়েছে, ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয় ভাকরা-নাঙ্গল রেল পরিষেবা৷ ভাকরা নাঙ্গাল ড্যাম বা বাঁধ নির্মাণের সময় একটি বিশেষ রেললাইনের প্রয়োজন পড়ে৷ কারণ, সেই সময়ে নাঙ্গল ও ভাখারের মধ্যে সংযোগের কোনও পথ ছিল না। ভারী যন্ত্রপাতিসহ মানুষের চলাচল করবে কী ভাবে? সেই প্রয়োজন থেকেই রুটে রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রাথমিকভাবে এই রুটে স্টিম ইঞ্জিনে চলত ট্রেন। পরবর্তীতে আনা হয় লোকোমোটিভ৷ ১৯৫৩ সালে আমেরিকা থেকে এই লোকোমোটিভটি আনা হয়৷ আজও ৬০ বছরের পুরনো সেই ইঞ্জিন দিয়েই চলছে ট্রেন৷
এই ট্রেনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু দিনের পুরনো ইতিহাস৷ এই ট্রেনের আসনগুলো আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ঔপনিবেশিক আমলে৷ আজকের ট্রেনের সঙ্গে এই ট্রেনের কিন্তু মিল খুঁজে পাওয়া দায়৷ স্পেশ্যাল ট্রেনের প্রতিটি কোচই অনন্য৷ এগুলো তৈরি হয়েছিল সুদূর করাচি শহরে৷ শিবালিক পাহাড়ের গা বেয়ে পঞ্জাবের নাঙ্গল বাঁধে পৌঁছনোর আগে এটি দাঁড়ায় নেহলা স্টেশনে৷ রেলের তথ্য বলছে, প্রতিদিন এই ট্রেন ছোটাতে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লিটার জ্বালানি খরচ হয়৷ তবুও কিন্তু ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড টিকিটের বন্দোবস্ত করেনি৷ এখনও বিনা পয়সায় এই রুটে যাতাযাত করার অনুমতি পান যাত্রীরা৷ তবে আগে এই স্পেশাল ট্রেনে ১০টি বগি ছিল৷ এখন রয়েছে মাত্র তিনটে বগি৷
ফ্রি সফর নিয়ে যে আলোচনা হয়নি, তেমনটা কিন্তু নয়৷ আর্থিক সমস্যার মধ্যেও পড়তে হয়েছে ভাকড়া বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ডকে৷ কিন্তু, রোজগারের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এই ট্রেনের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার রক্ষার উপরে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>