সাও পাওলো: আলবিদা রাজা! অগনিত মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা বুকে নিয়ে সমাহিত ফুটবল সম্রাট পেলে৷
আরও পড়ুন- রাজসিক সমাধি সৌধে শায়িত হবেন পেলে, ১৪ তলার সমাধিস্থলে থাকবেন সম্রাট
সমাধিস্ত করার আগে সোমবার শেষবারের মতো স্যান্টোসে নিয়ে আসা হয়েছিল ব্রাজিলীয় কিংবদন্তীর নিথর দেহ। এই ক্লাবে খেলেই ছেলেবেলা ও যৌবন কেটেছিল পেলের৷ চারাগাছ থেকে হয়ে উঠেছিলেন মহীরুহ পেলে৷ প্রয়াত সম্রাটকে শেষবারের মতো এখানে শায়িত রাখা হয়৷ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁর অগনিত ভক্ত৷
মঙ্গলবার পেলেকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তৃতীয়বারের মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভাও ৷ সকাল ৯টা নাগাদ স্যান্টোসের পাশের ক্লাব আতলেতিকো পর্তুগিজার স্টেডিয়াম উলরিকো মুরসায় অবতরণ করে তাঁর চপার৷ লুলার শ্রদ্ধা জানানোর আগে এবং পরেও শেষবারের মতো পেলেকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর অসংখ্য ভক্ত৷ এর কিছুক্ষণ পরেই পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী পেলের মরদেহ নিয়ে নেক্রোপোল একুমেনিকার ভার্টিকাল সেমেটারির দিকে রওনা দেয় শববাহী গাড়ি। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য বলছে, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সমাধিস্থল। ১৪ তলা ভবনের এই সমাধিস্থলে রয়েছে হাজার হাজার ভল্ট। রয়েছে একটি জলপ্রপাত এবং গাড়ির মিউজিয়াম৷
কোলন ক্যানসারের পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন ফুটবল সম্রাট৷ গত ২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ দু’দিন ব্যাপী চলে তাঁর শেষ যাত্রা৷ সোমবার ফুটবল কিংবদন্তীকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল ফেডারেশনের (কনমেবল) সভাপতি আলেহান্দ্রো দমিনগেজ এবং কনফেডারেশন অব ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের (সিবিএফ) সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ। এসেছিলেন ব্রাজিলের প্রাক্তন ও বর্তমান বহু খেলোয়াড়। ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধিরাও এসেছিলেন তাঁকে অন্তিম বিদায় জানাতে৷ তাঁরা সহমর্মিতা জানানা পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আওকি এবং সন্তানদের৷
মঙ্গলবার তাঁর মরদেহ স্যান্টোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো থেকে বার করে যখন মেমোরিয়াল নেক্রোপোল একুমেনিকার ভার্টিকাল সেমেটারির দিকে নিয়ে যাওয়ার হয়, তখন রাস্তার দু’ধারে ভিড় জামিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ৷ কারও হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা প্রিয় ফুটবলারকে ভালোবাসার কথা৷ কারও গায়ে আবার স্যান্টোসে পেলের সেই বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সি। কেউ কাঁদলেন অঝোরে, কেউ আবার শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর মরদেহ বহনকারী গাড়িতে ছেটালেন ফুল৷ এদিন তাঁর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় ক্যানাল ৬ সড়ক দিয়ে, যেখানে থাকেন পেলের শতায়ু মা সেলেস্তা৷ তবে তিনি এখন শয্যাশায়ী। ছেলের চলে যাওয়ার খবরও বুঝে উঠতে পারেননি তিনি৷ স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে তাঁর৷
শবযাত্রার পর পেলেকে সমাধিস্থ করা হয় মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকার প্রথম তলায়। তবে সেখানে সাধারণ মানুষদের প্রবেশাধিকার ছিল না। শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরাই উপস্থিত ছিলেন। ব্রাজিলের দৈনিক ও’গ্লোবোর অনলাইন সংস্করণ থেকে জানা গিয়েছে, যাবতীয় রীতিনীতি পালন করার পর স্থানীয় সময় বেলা ২টো নাগাদ পেলেকে সমাধিস্থ করা হয়।
ফুটবল কিনবদন্তীকে সম্মান জানিয়ে ফিফার অধীনে থাকা বিশ্বের ২১১টি দেশে পেলের নামে একটি করে স্টেডিয়াম করার আবেদন জানাবে ফিফা৷ ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ানি ইনফানতিনো ব্রাজিলে গিয়ে পেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন যে, সব ফুটবল খেলিয়ে দেশকে আবেদন করবেন একটি করে স্টেডিয়াম পেলের নামে নামাঙ্কিত করার জন্য।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>