কমছে পৃথিবীর গতি, দীর্ঘ হচ্ছে দিন! এই বাঁধে আতঙ্কের জাল বুনছে চিন

কমছে পৃথিবীর গতি, দীর্ঘ হচ্ছে দিন! এই বাঁধে আতঙ্কের জাল বুনছে চিন

 কলকাতা: এশিয়ার দীর্ঘতম এবং বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম  চিনের ইয়াংৎজি নদীর উপর গড়ে উঠেছে থ্রি গর্জেস বাঁধ৷ বিপুল জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই বাঁধ পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম। 

আরও পড়ুন- আকাশে শয়ে শয়ে উড়ন্ত চাকতি! ‘ইউএফও’? ভিনগ্রহীদের আনাগোনা নিয়ে বাড়ছে বিস্ময়

তবে চিনের ইলিং জেলার সান্ডৌপিং শহরে গড়ে ওঠা এই বাঁধ শুধুমাত্রই শক্তি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত নয়। এই বাঁধের জেরে পরিবর্তন এসেছে পৃথিবীর আহ্নিক গতিতে৷ এমনকি পৃথিবীর আকৃতিতেও বদল এনে দিয়েছে চিনের থ্রি গর্জেস বাঁধ। ২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, এই বাঁধের বিপুল জলরাশির ভারে আগের চেয়ে কিছুটা ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে আমাদের পৃথিবী।

নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, থ্রি গর্জেস বাঁধের কারণে পৃথিবীর মধ্যিখানের অংশ সামান্য স্ফীত এবং দুই মেরু অঞ্চল চেপে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে৷ কারণ হল থ্রি গর্জেস বাঁধের বিপুল জলরাশির মারাত্মক চাপ। এই চাপের ফলেই পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমে গিয়েছে। বেড়ে গিয়েছে দিনের দৈর্ঘ্য। বিজ্ঞানীরা বলছে, চিনের তৈরি এই থ্রি গর্জেস বাঁধের জন্য দিনের দৈর্ঘ্য ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই পরিবর্তন এতটাই কম যে, তা সাধারণ মানুষের নজরে পড়ে না।

থ্রি গর্জেস বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। এই বাঁধ নির্মাণে হাত লাগিয়েছিল ৪০ হাজার কর্মী৷ বাঁধ তৈরির জন্য প্রায় ৩ কোটি ঘন মিটার কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বাঁধ নির্মাণে সময় লাগে ১৭ বছর৷ এর পরেও নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়নি। জাহাজ তোলার জন্য ‘শিপ লিফ্ট’-সহ আরও নানা যন্ত্রপাতি পরবর্তীতে তৈরি করা হয়। থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণ করতে খরচ হয় ২৬ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা৷ ইয়াংৎজি নদীর উপর নির্মিত ২.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের উচ্চতা ১৮০ মিটার।

থ্রি গর্জেস বাঁধ এমন প্রযুক্তিতে তৈরি, যা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি একটি পর্যটন স্থলও হয়ে উঠেছে৷ থ্রি গর্জেস বাঁধ  চাক্ষুষ করতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এখানে ছুটে আসেন।

তবে, থ্রি গর্জেস বাঁধের ইতিহাস ঘাটলে দেখে যাবে এর পরতে পরতে জড়িয়ে বিতর্ক। ফি বছর ইয়াংৎজি নদী বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করত। প্লাবিত হত চিনের বহু অঞ্চল। প্রাথমিক ভাবে এই প্লাবন রুখতেই ইয়াংৎজি নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের চিন্তাভাবনা করা হয়। বিপ্লব পূর্ববর্তী চিনের প্রেসিডেন্ট সান ইয়াৎ সেন সর্বপ্রথম এই বাঁধের পরিকল্পনা করলেও গৃহযুদ্ধ এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি৷  

১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট মাও জে দং থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পাঁচ দশক পর বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে বাঁধ নির্মাণের পর প্রথম বার থ্রি গর্জেস বাঁধ যখন জলভর্তি করা হয়, তখন ওই জল বেরিয়ে চিনের দেড় হাজার শহরকে ভাসিয়ে দেয়। যা সেই সময় আন্তর্জাতিক হেডলাইন হয়ে ওঠে৷ পরে এই বাঁধে কংক্রিট স্যুট, স্পিলওয়ে গেট-সহ নানা জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এই বাঁধ নির্মাণের কাজ মোটেও সহজ ছিল না। ৩২টি টারবাইন রয়েছে এখানে৷  এক একটি মোট ৭০০ মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদনে সক্ষম, এমন টারবাইন ব্যবহার করা হয় থ্রি গর্জেস বাঁধে। থ্রি গর্জেস বাঁধের জেরেই ফুলেফেঁপে ওঠে চিনের অর্থনীতি৷