মুম্বই: নীরবে চলে গেলেন একদা বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বেলা বসু৷ অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন নৃত্যশিল্পী৷ তাঁর শিল্প সত্ত্বা কারও অজানা নয়৷। সোমবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বর্ষীয়ান এই শিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আরও পড়ুন- ২৬/১১ হামলাকারীরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়, পাকিস্তানে বসেই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ জাভেদের
তরুণ প্রজন্মের কাছে বেলা বসু হয়তো সে ভাবে পরিচিত নন। তবে ষাটের দশকে নিজ দক্ষতায় বলিউড জয় করেছিলেন এই বাঙালি কন্যা। তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা শোনা যেত লোকমুখে। তবে তিনি অনেক বেশি পারদর্শী ছিলেন নাচে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে বলিউডের গান, যে কোনও নাচেই সমান পারদর্শী ছিলেন এই বঙ্গতনয়া। নৃত্যশিল্পী হিসাবে তিনি এক সময় এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন যে, অনেকেই তাঁকে হেলেনের সঙ্গে তুলনা করতেন। হেলেন, অরুণা ইরানিদের মতো তারকার সঙ্গে উচ্চারিত হত বেলা বসুর নামও৷
১৯৪১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতায় জন্ম বেলা বসুর। তাঁর বাবা অমূল্যরতন বসু ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী৷ খুব একটা স্বচ্ছল ছিল না তাঁর পরিবার৷ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেই ১৯৫১ সালে পরিবার নিয়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন অমূল্যরতন। নতুন শহরে এসে সংসার গুছিয়ে উঠতে না উঠতেই ছন্দপতন। ১৯৫৩ সালে এক পথ দুর্ঘটনায় মারা যান বেলার বাবা।
অমূল্যরতনের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে হয় বেলার মা লীলাবতীদেবীকে। একটি হাসপাতালে নার্সের কাজে যোগ দেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই নাচের তালিম নিয়েছিলেন বেলা। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতেই চার ভাইবোনের সংসারের ভার আসে তাঁর কাঁধেও।
হিন্দি ছবিতে গ্রুপ ডান্সার হিসাবে ছোটখাটো সুযোগ আসে বেলার সামনে। সংসারের চাপে পেশা হিসাবে সেটাকেই তখন আঁকড়ে ধরেন তিনি। কারণ বেলার সামনে তখন আর কোনও পথ খোলা ছিল না। নাচ ছিল তাঁর শিরায় শিরায়৷ তাই তো যে কোনও নাচ অবলীলায় আয়ত্ত করে নিতে পারতেন তিনি।
সেই নাচের সূত্রেই বলিউডে এন্ট্রি হয় এই বাঙালি কন্যার৷ একাধিক ছবিতে নাচের দলে দেখা গিয়েছে তাঁরে। কিন্তু বয়সের তুলনায় কিশোরী বেলা ছিলেন অনেকটাই লম্বা এবং রোগা। ফলে বার বার নাচ থেকে বাদ পড়তেন তিনি৷ তবে পরে সুযোগ পান তিনি৷ বলিউডে একক নৃত্যশিল্পী হিসাবে তিনি প্রথম ব্রেক পান ‘ম্যাঁয় নশে মে হুঁ’ ছবিতে। রাজ কাপুর এবং মালা সিনহা অভিনীত ছবিটিতে বেলার নাচ আলাদা জায়গা দখল করেছিল। এরপর ১৯৬২ সালে আসে সবড় সুযোগ৷ মাত্র ২১ বছর বয়সে বলিউডে প্রথম নায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন বেলা বসু।
১৯৬২ সালে ‘সওতেলা ভাই’ ছবিতে গুরু দত্তের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ওই বছরই ‘হাওয়ামহল’ ছবিতে তাঁকে দেখা যায় হেলেনের বোনের ভূমিকায়। নাচের মতোই এর সময় অভিনয়ের জগতে দাপট দেখিয়েছিলেন বঙ্গতনয়া। পরিচালক, প্রযোজকদের কখনই হতাশ করেননি তিনি৷
১৯৬৬ সালে ‘নাগিন অউর সাপেরা’ ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন বেলা। ওই ছবিতে হিরো ছিলেন মনোহর দেশাই। বেলার কেরিয়ারে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘বন্দিনী’, ‘প্রফেসর’, ‘আম্রপালী’, ‘শিকার’, ‘প্রেমপত্র’, ‘জিদ্দি’, ‘চিত্রলেখা’, ‘পুনম কে রাত’, ‘বক্সার’, ‘অভিনেত্রী’ এবং ‘জয় সন্তোষী মা’।
১৯৬৭ সালে অভিনেতা তথা পরিচালক আশিস কুমারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই নৃত্য শিল্পী। বিয়ের পর থেকেই বলিউড থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন তিনি। দুই সন্তানের জন্মের পর ক্রমেই বলিউডকে আলবিদা জানান বেলা৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>