২০২৩-এ কোন পথে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ? কী বলছেন সামরিক বিশ্লেষকরা

২০২৩-এ কোন পথে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ? কী বলছেন সামরিক বিশ্লেষকরা

কলকাতা:  বর্ষপূর্তির দোরগোড়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ৷ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের মাটিতে সামরিক অভিযান শুরু করেছেন ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ৷ গত এক বছরে বহু মৃত্যু, বহু ধ্বংস দেখেছে ইউক্রেনের মানুষ৷ নৃশংসতার সাক্ষী থেকেছে গোটা বিশ্ব৷ নতুন বছরে এসে সেই যুদ্ধে ইতি পড়বে কি? ইতি পড়লেও বা কী ভাবে? যুদ্ধক্ষেত্রে পেশীশক্তির জোড়ে নাকি আলোচনার টেবিলে? নাকি ২০২৪-ও সাক্ষী থাকবে রক্তের হোলি খেলার? নববর্ষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উঠে আসছে এমন হাজারো প্রশ্ন৷ ২০২৩ সালে কোন দিকে মোড় নেবে রাশিয়া-ইউক্রেনের এই সংঘাত? এই বিষয়ে বেশ কিছু সামরিক বিশ্লেষকের কথা তুলে ধরেছে বিবিসি৷ 

আরও পড়ুন- শুধুমাত্র চিনা পর্যটকদের নিশানা করে বিধিনিষেধ! পাল্টা হুঁশিয়ারি বেজিং সরকারের 

 

গ্রেট ব্রিটেনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সহযোগী পরিচালক মাইকেল ক্লার্ক মনে করছেন, আগামী বসন্তে ইউক্রেনের উপর নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন৷ সেক্ষেত্রে এই হামলা চলমান যুদ্ধের ভাগ্যনির্ধারক হতে পারে৷ 

মাইকেল ক্লার্কের কথায়, দীর্ঘ সংগ্রামের পর দুই পক্ষেরই যুদ্ধ বিরতি প্রয়োজন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের কাছে সামনে এগোনোর পথ অনেক বেশি প্রশস্থ৷ তারা অনেক বেশি সুসজ্জিত, অনুপ্রাণিত। ইউক্রেনীয় সেনা বেশ ভালো মতোই রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখবে বলে আশা করা যায়। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধে বড় সাফল্য পেলে কিয়েভকে রোখা যাবে না৷ খেরসন পুনরুদ্ধারের পর তারা কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমে হামলা আরও জোরদার করেছে। ফলে কিয়েভের পক্ষ থেকে হঠাৎ করে চলতি বছরে নতুন হামলা যে হবে না, সে কথা জোড় দিয়ে বলা যায় না৷ 

মাইকেল ক্লার্কের মতে, ২০২৩-এর বসন্তই হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারক। পুতিন জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ হাজার সেনা ইতিমধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন। বাকি আড়াই লক্ষ সেনা নববর্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এই নতুন রুশ বাহিনীর ভাগ্য যতক্ষণ না নির্ধারিত হচ্ছে, ততক্ষণ যুদ্ধ ছাড়া অন্য বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। 

আবার ওয়াশিংটন ডিসি-র এক বিশ্লেষক আন্দ্রেই পিয়নটকভস্কির মতে, ২০২৩ সালের বসন্তে ইউক্রেন পুরোপুরি তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার করে যুদ্ধে জয়ী হবে। এর পিছনে দুটি কারণ উল্লেখযোগ্য৷  প্রথমত, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী ও সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনীয় জাতির প্রেরণা, সংকল্প ও সাহস। যা আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন যে ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তার ব্যাপকতা অবশেষে পশ্চিমী দুনিয়া উপলব্ধি করতে পেরেছে।

কিংস কলেজ লন্ডনের যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের বারবারা জ্যানচেটার বলেন, পুতিন মনে করেছিলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে তাদের সহজেই গুঁড়িয় দেওয়া যাবে৷ এই যুদ্ধে অন্যান্য দেশগুলোর অর্থপূর্ণ ভূমিকা থাকবে না। কিন্তু পুতিনের সেই হিসাব সম্পূর্ণ ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে৷ তাঁর এই ভুল সমীকরণই যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করেছে। 

বারবারা জ্যানচেটারের মতে, শীতকালটা বেশ কঠিন হবে। কারণ, রাশিয়া হামলার তেজ বাড়িয়ে ইউক্রেনীয়দের মনোবল, সহনশীলতা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে ইউক্রেনীদের সহনশীলতা যে এত সহজে ভাঙা যাবে না, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। তারা হার মানবে না৷ 

ইউরোপে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর সাবেক কমান্ডিং জেনারেল বেন হজসের মনে করছেন, কিয়েভে বিজয় কুচকাওয়াজের পরিকল্পনা করার সময় হয়নি। কিন্তু যুদ্ধের সবকিছু এখন ইউক্রেনের পক্ষে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে ইউক্রেনই এই যুদ্ধে জয়ী হবে। আর তা সম্ভবত ২০২৩ সালেই হবে।