পৃথিবীর গর্ভে লুকিয়ে সূর্যের ভাণ্ডার! আবিষ্কারে নয়া চমক

পৃথিবীর গর্ভে লুকিয়ে সূর্যের ভাণ্ডার! আবিষ্কারে নয়া চমক

কলকাতা:  সূর্য ছাড়া এই পৃথিবী অস্তিত্বহীন৷ সূর্যের গর্ভ থেকেই জন্ম হয়েছিল নীল গ্রহের৷ শুধু নীল গ্রহই নয়, সূর্য থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা অংশগুলোই তো এক একটি গ্রহ৷ যারা আদি অনন্তকাল ধরে ঘুরে চলেছে সূর্যের চারপাশে৷ সূর্য থেকে সৃষ্ট হওয়ায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীর মধ্যেও সুপ্ত রয়েছে কিছু সৌর পদার্থ৷ তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, সূর্যের অন্দরে রয়েছে হিলিয়ামের সম্ভার৷ কিন্তু, পৃথিবীতে হিলিয়াম প্রায় পাওয়াই যায় না। এটা কী ভাবে সম্ভব? বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতেও হিলিয়াম আছে৷ তবে তা সুপ্ত৷ জন্মলগ্ন থেকে তা বন্দি রয়েছে মাটির নীচে৷ 

আরও পড়ুন- রুক্ষ মঙ্গলে ছিল হাজার ফুট পর্যন্ত গভীর সমুদ্র! নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্য

পৃথিবীতে একযোগে হিলিয়ামের খোঁজ শুরু করেন ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকার বিজ্ঞানীরা৷ তাঁরা যে আবিষ্কারটি করেন, তা হিলিয়ামের সন্ধানে নতুন পথ দেখাচ্ছে৷ পৃথিবীতে সমুদ্রের উপরে প্রথম স্থলভাগ ভেসে ওঠে ভারতে৷ সেটি হল অধুনা ঝাড়খণ্ডের সিংভূম অঞ্চল৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অঞ্চলেই লুকিয়ে হিলিয়ামের ‘খনি’৷ 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক প্রিয়দর্শী চৌধুরী ও তাঁর সতীর্থরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন,  সূর্যের হিলিয়ামের ভান্ডার মজুত রয়েছে পৃথিবীতেও।

চৌধুরী এবং সতীর্থরা রীতিমতো অঙ্ক কষে জানিয়েছেন, পৃথিবী যখন শীতল হতে শুরু করে, তখন সিংভূম অঞ্চলই প্রথম জলের উপরে জেগে উঠেছিল। ওই পাথরগুলির মধ্যেই বন্দি রয়েছে সূর্য থেকে আসা হিলিয়াম৷ যাকে সৌর হিলিয়ামও বলা যেতে পারে। প্রচণ্ড চাপে এই পাথরগুলিতে ফাটল ধরেছে  এবং সেই ফাটল ভেদ করেই লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বেরিয়ে আসছে হিলিয়াম গ্যাস। এই সংক্রান্ত গবেষণার কথা লেখা রয়েছে খ্যাতনামা এক  জার্নালে৷ 

হিলিয়াম গ্যাসের উৎস কোথায়? ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম থেকে তেজস্ক্রিয়তার জন্যে হিলিয়াম গ্যাস নির্গত হচ্ছে। তেজস্ক্রিয় বিক্রিয়া থেকেই তার উৎস৷ কিন্তু হিলিয়াম কোনও পদার্থের সঙ্গে সংযোগ করে না৷ এই গ্যাস ওজনেও হালকা৷ তাই সহজেই বেরিয়ে আসতে পারে। সেই কারণেই রকেটের চুল্লির পদার্থগুলি জ্বলে যাওয়ার পর ফাঁকা অংশ হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়। নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও হিলিয়াম গুরুত্বপূর্ণ।

এত দিন আমেরিকা ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে হিলিয়াম রফতানি করেছিল। কিন্তু, তারা হিলিয়াম রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এর দামও লাফিয়ে বাড়ছে৷ এদিকে, ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই)থেকে রকেট উৎক্ষেপণের জন্য, পারমাণবিক চুল্লিতে, সুপার কন্ডাক্টিভ সাইক্লোটনের ক্ষেত্রে, ‘অতি-শীতল’ প্রযুক্তিতে প্রয়োজন হিলিয়ামের। ফি বছর হিলিয়াম কিনতে ভারতের ৫৫,০০০ কোটি টাকা খরচ হয়। আমেরিকা রফতানি বন্ধ করায় তা আরও বাড়া স্বাভাবিক।

ভারতে হিলিয়াম আবিষ্কারের গল্পটা বেশ মজাদার। ১৯৫৬ সাল৷ সেই সময় বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। বিশ্বভারতীর নানা ঝঞ্ঝাটের হাত থেকে নিস্তার পেতে তিনি হামেশাই বেরিয়ে পড়তেন আশেপাশের গ্রামাঞ্চলে ঘুরতে৷ এ ভাবেই ঘুরতে ঘুরতেই তিনি একবার বক্রেশ্বর গ্রামে এসে পৌঁছন৷ সেখানে এসে দেখেন  একটি কুণ্ডে বইছে প্রাকৃতিক ভাবে ফুটন্ত জল৷ আর তার থেকে বেরিয়ে আসছে একটি প্রাকৃতিক গ্যাস। রহস্য ঘেরা এই জায়গায় আবার কাপালিকদের আখড়া৷ কিন্তু এই জায়গাটি সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করে৷ তিনি ছিলেন অঙ্কে তুখোর৷ কিন্তু পদার্থবিদ্যার ঘটনা বিশ্লেষণে একটু আধটু চিন্তাভাবনা করতে হত তাঁকে৷ অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন এটি হিলিয়াম গ্যাস।

এর পর অধ্যাপক বসু এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করার দায়িত্ব দেন তাঁর প্রিয় ছাত্র শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায়কে৷ তিনি কিছু দিনের মধ্যেই আবিষ্কার করেন, এই ধোঁয়াশা গ্যাস অন্য কিছু নয়, হিলিয়াম। গ্যাসের ১.৮% হল হিলিয়াম৷ শ্যামাদাসবাবুর ধারণা ছিল, বক্রেশ্বর এবং তার কাছাকাছি তাঁতলুই অঞ্চলেই (ঝাড়খণ্ড) লুকিয়ে রয়েছে হিলিয়ামের এক বিশাল সমুদ্র।