ফুটবল দল গড়তে বেচেছেন জমি-বাড়ি, সবুজ মাঠেই জীবন ‘ফুটবল চাচা’র

ফুটবল দল গড়তে বেচেছেন জমি-বাড়ি, সবুজ মাঠেই জীবন ‘ফুটবল চাচা’র

বাঁকুড়া: সবুজ রক্তে লেখা তাঁর জীবন৷ প্রেম সবুজ মাঠে৷ ফুটবল পায়ে নিয়ে যখন ছুটে চলেন তাঁর দলের ছেলেরা, তখন মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁর শিড়া দিয়েও বয়ে চলে উষ্ণ স্রোত৷ আদ্যন্ত ফুটবলপ্রেমী একটা মানুষ৷ নাম ‘ফুটবল চাচা’৷ হ্যাঁ, এই নামেই এলাকায় পরিচিত তিনি৷ 

আরও পড়ুন- হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ, ‘দুয়ারে রেশন’ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত শীর্ষ আদালতের

আপদে বিপদে, প্রিয়জনের জীবন রক্ষায় কত মানুষই আছেন যাঁরা নিজেদের জমি-বাড়ি বিক্রি করে দেন৷ তা  বলে ফুটবল টিম গড়তে ভিটে-মাটি ছাড়া! এমন কথা কস্মিনকালেও বোধহয় কেউ শোনেননি৷ তবে ব্যতিক্রম বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের মুরালিগঞ্জের বাসিন্দা আনোয়ার হুসেন মোল্লা ওরফে ফুটবল চাচা৷ যিনি কিনা নিজের ফুটবল টিম গড়ার জন্য সর্বস্বান্ত হতেও দু’বার ভাবলেন না৷

আবদুল চাচা জানান, ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক তাঁর৷ বড় ছেলার যখন খেলত, তখন তাঁদের পাশে পাশে থাকতে বড় বালোবাসতেন তিনি৷ গোলকিপারও ছিলেন৷ তখন থেকেই ফুটবলের প্রতি এই টান৷ নিজে বড় খেলোয়ার হতে না পারলেও তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটি ফুটবল দল৷ প্লেয়ারদের সে ভাবে অর্থ দিতে না পারলেও ভালোবাসার অভাব নেই এই দলে৷ কাউকে হাত খরচ, কাউকে গাড়ি ভাড়া দেন৷ ফাইনাল হলে ছেলেদের হাতে কিছু টাকা দিতে পারেন ফুটবল চাচা৷ তাঁর কথায়, ‘‘সকলে আমাকে ভালোবাসে, সেই কারণেই টিমটা তৈরি করতে পেরেছি৷’’ এখন যাঁরা তাঁর দলে ফুটবল খেলেন, তাঁরা সকলেই চাচা অন্ত প্রাণ৷ প্রাক্তনরও খোঁজ রাখেন৷ তাঁদের থেকেও অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছেন চাচা৷ 

এই ফুটবল টিম গড়তে কি জমিজমা বিক্রি করেছেন? প্রশ্ন শুনে নিষ্পাপ হাসি চাচার মুখে৷ লাজুর সুরে বলেন, ‘‘অনেকেই এমনটা বলেন৷ কিছুটা এমন হয়েওছে৷ আমি বাড়িও বানিয়েছি৷ এখনও ব্যবহার করতে পারিনি৷ ঈশ্বর চাইলে সব কিছু আবার হবে৷’’ তবে চাচার একটাই শাস্তি, তাঁর দলের ছেলেরা আজ ভালো ভালো জায়গায় ফুটবল খেলছেন৷ আনোয়ার বলেন, ‘‘অনেকেই বাইরে বাইরে খেলছেন৷ কিছু আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে নতুন টিম গড়েছি৷ চারদিকে খেলে বেরাচ্ছি৷’’ 

গ্রামের কচিকাঁচারও চাচা ভক্ত৷ সকলেই মাঠে চাচার দলকে সমর্থন করতে এসেছে৷ তাঁদের জন্য চাচাও হাতে করে নিয়ে এসেছে লজেন্স৷ আনোয়ার বলেন, গ্রামের প্রায় ২০০ ছেলে রয়েছে, যারা চাচা ছাড় কিছুই বোঝে না৷ তবে চাচার খেদ, আজকাল ছেলেরা এত বেশি মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে যে ক্লাবে মন দিচ্ছে না৷ খেলার প্রতিও টান কমছে তাঁদের৷ তবে তিনি যতদিন বাঁচবেন চেষ্টা করে যাবেন ফুটবলকে খেলা চালিয়ে যেতে৷ এমনটাই জানান ফুটবল চাচা৷