কলকাতা: মোদী জমানায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাপট বেড়েছে অনেকটাই! পাল্লা দিয়ে আদালতে জমছে মামলার পাহাড়। অন্তত পরিসংখ্যান তেমনটাই বলছে৷ এদিকে অভিযোগ, সিবিআই-ইডিকে ব্যবহার করে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ এমতাবস্থায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম শীর্ষ এজেন্সির তদন্ত প্রক্রিয়া। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, সিবিআইয়ের হাতে থাকা প্রায় ৬,৭০০টি দুর্নীতির মামলার ভাগ্য আদালতে ঝুলে রয়েছে। এর মধ্যে ২৭৫টি মামলা চলছে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
আরও পড়ুন- বোমা মেরে খুন করা হবে! প্রাণনাশের হুমকি পেলেন রাহুল
বাংলার দিকে তাকালে দেখা যাবে, শুধুমাত্র শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে অতিসক্রিয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ কিন্তু রাজ্যে তাদের হাতে থাকা ৫০০-র বেশি দুর্নীতির মামলা পড়ে রয়েছে আদালতে৷ এই সকল মামলার কোনওটির বয়স দশ বছর, কোনওটির আবার কুড়ি পেরিয়েছে। পাঁচটি বিশেষ আদালতে বিচারক পদ খালি পড়ে রয়েছে৷ এই মামলাগুলি আদৌ কবে শেষ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান স্বয়ং সিবিআই আধিকারিকরা। এর উপর নতুন নতুন মামলার দায়িত্ব এসে চলেছে। আগামী দিনেও আসবে। এত কম লোকবল নিয়ে কীভাবে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে? দিশাহারা সিবিআই৷
সম্প্রতি এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই-এর শ্লথ গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ তদন্ত নিয়ে কিছুটা সংশয়ও প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷ নিম্ন আদালতে যে মামলা চলছে, সেই মামলার ভারপ্রাপ্ত বিচারক বারবার জানতে চেয়েছেন, তদন্ত শেষ হতে আর কতদিন লাগবে? পথেঘাটে আমজনতারও একটাই প্রশ্ন, সিবিই-কে তদন্ত ভার তো সঁপা হল। কিন্তু ফল কবে আসবে? এই প্রশ্ন নিতান্তই অমূলক নয়৷ কারণ সারদা, রোজভ্যালির মতো হাই প্রোফাইল মামলাগুলির দশা দেখে অনেকেই সন্দিহান।
২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা মামলার তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই৷ এই আট বছরে অনেক স্রোত বয়ে গিয়েছে গঙ্গা দিয়ে, কিন্তু তদন্ত শেষ হয়নি। একই হাল রোজভ্যালি বা অন্য চিটফান্ড মামলাগুলির৷ শুধু ভোটের আগে একটু নড়েচড়ে বসা। তারপর আবার সেই ঠান্ডা ঘরে পড়ে থেকে ফাইলে পড়ে ধুলোর আস্তরণ। নারদ কেলেঙ্কারির কথা ধারা যাক৷ সেই মামলার চার্জশিটে শাসকদলের বহু প্রভাবশালীর নাম রয়েছে। তবে সেই মামলা এখন ‘ফারদার ইনভেস্টিগেশন’ পর্বে। এই মামলার ভবিষ্যৎ কারও জানা নেই।
দশ বছর আগে দুর্নীতি কাণ্ডে ধরা পড়েছিলেন সেবির এক শীর্ষ কর্তা। তার বিচার আজও চলছে। আবার বছর পাঁচেক আগে দুর্নীতির দায়ে কলকাতা থেকে গ্রেফতার হওয়া সিবিআইয়ের এক প্রাক্তন কর্তার নামে চার্জশিট দেওয়া হলেও মামলা শেষ হয়নি। এখানেই শেষ নয়৷ ২০০৮ সালে ভারতীয় জাদুঘরের তহবিল কেলেঙ্কারিতেও একাধিক মামলা দায়ের করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তারপরের কথা অনেকেরই জানা নেই।
জানা গিয়েছে, কলকাতার সাতটি আদালতে ৫০০টির বেশি দুর্নীতির মামলা ঝুলে রয়েছে৷ এর মধ্যে শুধু নিয়োগ দুর্নীতি, গোরু ও কয়লা পাচারের তদন্তে সক্রিয় সিবিআই৷ আলিপুরে সিবিআই-এর দু’টি বিশেষ আদালতে ১৯৯টি মামলা আর ব্যাঙ্কশালে পাঁচটি বিশেষ আদালতে ৩০০-র বেশি কেস পেন্ডিয়৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>