কৃষ্ণনগর: বাঙালির নোবেল জয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে গোটা বাংলা৷ তা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি, আলোচনাও হয়েছে৷ কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, কারা নোবেল পাবেন, তা ঠিক করার দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে একজন বাঙালির কাঁধেই৷ তিনি একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী৷ বাড়ি নদীয়ার গাঙনাপুরের গোপীনগরে৷ তবে আপাতত তাঁর ঠিকানা নরওয়ে৷ সেখানে অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ বিভাগের অধ্যাপক তিনি৷ নাম অসীম দত্তরায়৷
আরও পড়ুন- সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে চান অনুপমের স্ত্রী! সাক্ষাৎ চাইছেন মমতার সঙ্গে
নদীয়ার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান৷ কিন্তু অখ্যাত এক গ্রাম থেকে উঠে আসা বাঙালি বিজ্ঞানীর সাফল্যের গল্প অনেকেরই অজানা। প্রতিবছর পর্দার আড়ালে থেকেই কাজ করে চলেছেন তিবি৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানে বছরের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারগুলোর খোঁজ নোবেল কমিটির কাছে পৌঁছে দেন এই বঙ্গসন্তানই। এবছরও নোবেল কমিটি থেকে অসীম দত্তরায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ প্রথম সারির এক সংবাদমাধ্যমকে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অসীম বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত গর্বিত। একজন বাঙালি বিজ্ঞানী হিসেবে এটা আমার কাছে বিরাট সম্মান৷ প্রতিবারের মতো এবছরও নোবেল কমিটি ওষুধ বিভাগে নোবেল পুরস্কারের জন্য আমার থেকে নাম চেয়েছে।’’ তিনি জানান, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গেই তিনি সই দায়িত্ব পালন করবেন।
বারবার চিকিৎসাশাস্ত্রে বাঙালির অবদানের সাক্ষী থেকেছে ইতিহাস৷ সিরোসিস অব লিভার ইন চিল্ড্রেন-এর গবেষক নীলরতন সরকার থেকে শুরু করে বাংলার প্রথম বিদেশি ডিগ্রিধারী মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী বসু, মহেন্দ্রলাল সরকার, লালমাধব মুখোপাধ্যায়, বনবিহারী মুখোপাধ্যায়, বিধানচন্দ্র রায়ের নাম কারও অজানা নয়৷ ফি বছর বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বা সৃষ্টিগুলোকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়৷ এর মধ্যে অন্যতম বিষয় হল চিকিৎসা বিজ্ঞান। চিকিৎসা শাস্ত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়ে নোবেল পুরস্কারের সম্মানিত করা হয়। কিন্তু কারা নোবেল প্রাপকদের দৌড়ে থাকবেন তা ঠিক করবেন নদিয়ার এই বাঙালি বিজ্ঞানী। নিয়ে ষষ্ঠবার নোবেল কমিটি তাঁর সুপারিশ করা নাম বিবেচনা করবে৷
গত ছয় বছর ধরে নোবেল কমিটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তকারী আবিষ্কারের হদিশ দিয়ে চলেছেন এই বাঙালি বিজ্ঞানী৷ তবে কারা কারা তাঁর হাত ধরে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে, তা জনা যায়নি৷ এটাই নোবেল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী৷ সম্প্রতি নোবেল কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক থমাস পার্লমান মেইল করেছিলেন আসীমকে৷ সেখানে নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রার্থী মনোনীত করার আহ্বান জানান তিনি। অসীম দত্তরায়ের আরও একটি দিক রয়েছে৷ অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত ফুড অ্যান্ড রিসার্চ জার্নালের মুখ্য সম্পাদক তিনি।
অসীমের ছেলেবেলা কেটেছে নদীয়ার গাঙনাপুরের গোপীনগরে৷ সেখানেই গোপীনাগর হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন৷ সেই সময় স্কুল বলতে ছিল একটা খোলা জায়গা। গাছের তলায় মাটিতে বসেই চলত পড়াশোনা। অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা তাঁর৷ অতীতের কথা বলতে গিয়ে এখনও গলা ভারী হয়ে আসে তাঁর৷ অনেক সংগ্রাম করে মিলেছে সাফল্যের স্বাদ। ১৯৮১ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষার জন্য আমেরিকা পাড়ি দেন। তারপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ অধ্যাপক, মুখ্য বৈজ্ঞানিক হিসাবে কাজ দায়িত্ব সামলেছেন৷ ২০০১ সাল থেকে তিনি রয়েছেন সলো বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ তাঁর নামে পাঁচটি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট রয়েছে।
সুদূর নরওয়েতে থাকলেও, একবারের তরেও ভোলেননি দেশের কথা৷ ভোলেননি দেশের মাটির সোঁদা গন্ধ৷ কর্মব্যস্ততার মধ্যেও বছর একবার হলেও তিনি চলে আসেন গোপীনগরে। তবে করোনার জেরে গত দু’বছর দেশে আসা হয়নি তাঁর৷ অসীমের কথায়, ‘‘গ্রামের কথা খুব মনে পড়ে। এবছর অক্টোবর- নভেম্বর নাগাদ দেশে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>