মুম্বই: প্রয়াত বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার৷ বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর৷ অসুস্থতার কারণে গত এক বছর ধরে একাধিক বার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল৷ শেষবার ভর্তি হন গত বুধবার৷ আর বাড়ি ফেরা হল না তাঁর৷
আরও পড়ুন- একটি যুগের অবসান, দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে শোকবার্তা মোদী-মমতার
অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে জন্ম হয় দিলীপ কুমারের৷ বাবা-মা তাঁর নাম রেখেছিলেন ইউসুফ৷ ১৯৩০ সালে পরিবার নিয়ে তৎকালীন মুম্বইয়ে চলে আসেন লালা গুলাম সারওয়ার৷ তিনি ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত ফলের ব্যবসায়ী৷ ইউসুফের মায়ের নাম ছিল আয়েশা বেগম৷ কিন্তু এক রোখা ছেলের সঙ্গে বাবার সম্পর্কে কোনও দিনই মধুর ছিল না৷ ইউসুফ পড়তেন নাসিকের বার্নেস বোর্ডিং স্কুলে। পড়াশোনা শেষ করে পুণে চলে যান তিনি৷ সেখানে আলাপ এক ক্যান্টিন কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে। সেনাবাহিনীর ক্লাবের কাছে একটি স্যান্ডউইচের দোকান খোলেন ইউসুফ। ইংরেজিতে দক্ষতা থাকায় ব্যবসা দাঁড় করাতে বেশি সময় লাগেনি তাঁর৷ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা জমিয়ে ফের ফিরে আসেন মুম্বই৷
বাণিজ্যনগরীতে তখন রোজগারের পথ খুঁজছিলেন ইউসুফ৷ হতে চেয়েছিলেন ব্যবসায়ী৷ কিন্তু উপার্জনের তাগিদ তাঁকে নিয়ে আসে বম্বে টকিজ-এর দোরগোড়ায়৷ ইউসুফকে দেখেই পছন্দ হয়ে যায় অভিনেত্রী দেবিকা রানীর৷ মাসিক ১২৫০ টাকার বিনিময়ে তাঁকে চাকরিতে বহাল করা হয়৷ সেখানে কাজ করার সময়েই শশধর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ৷ তিনি এবং শশধর দু’জনেই অশোক কুমারকে চিত্রনাট্য লেখার কাজে সাহায্য করতেন৷ কিন্তু দেবিকা রানি তাঁকে বলেছিলেন অভিনয়ে মন দিতে৷ তিনিই দেন দিলীপ কুমার নাম৷
বলিউডে প্রথম ‘খান’ দিলীপ কুমার৷ ১৯৪৪ সালে মুক্তি পায় দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি ‘জোয়ার-ভাটা’৷ যদিও সে ভাবে বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারেনি ছবিটি৷ ১৯৪৭ সালে মুক্তি পায় ‘জুগনু’৷ এই ছবির হাত ধরেই সাফল্য ধরা দেয় তাঁকে৷ বলিউডে নয়া আন্দাজ নিয়ে এসেছিলেন দিলীপ কুমার৷ তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়৷ এর পর জোগান, দিদার, দাগ, দেবদাস, ইহুদি ও মধুমতীর মতো সিনেমা তাঁকে এনে দেয় ট্র্যাজেডি কিং-এর তকমা৷ ‘কোহিনুর’, ‘রাম আর শ্যামের’ মতো কমেডি ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি৷ ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মোঘল এ আজম’ ছবি তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়৷
আরও পড়ুন- প্রয়াত বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার
অন স্ক্রিন তো বটেই মধুবালার সঙ্গে অফস্ক্রিন রসায়নেও মুগ্ধ হয়েছিল দর্শকরা৷ তারানা ছবি থেকে শুরু হয় দিলীপ কুমার মধুবালার সম্পর্ক৷ কিন্তু নয়া দৌড় সিনেমায় এই সম্পর্কে ফাটল ধরে৷ আতাউল্লা খান মেয়ে মধুবালাকে আউটডোর শ্যুটিংয়ে যেতে দেননি৷ তাঁদের মধ্যে শুরু হয়েছিল ভুল বোঝাবুঝি৷ এই ছবিতে নাকিয়া বদলে নেন বিআর চোপরা৷ মধুবালার বদলে দিলীপ কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন বৈজয়ন্তী মালা৷ এর আগে অভিনেত্রী কামিনী কৌশলের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক ছিল দিলীর কুমারের৷ কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক পরিণতি পায়নি৷ বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কামিনীর দাদা৷
১৯৬৬ সালে নিজের থেকে ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার৷ বয়সের ফারাক থাকলেও তাঁদের সম্পর্কে তার ছাপ পড়েনি৷ যদিও শোনা যায় আটের দশকে পাকিস্তানি মেয়ে আসমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন দিলীপকুমার। এমন গুঞ্জনও শোনা যায়, তিনি নাকি সায়রা বানুকে ডিভোর্স করে আসমাকে বিয়েও করেছিলেন৷ কিন্তু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সায়রা বানুই ছিলেন তাঁর পাশে৷ ২০১৫ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্ম বিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে৷