মুম্বই: বলিউডের সঙ্গে ভূতের সম্পর্কে বেশ পুরনো৷ বলিউডে হরর মুভির সংখ্যা নেহাত কম নয়৷ শুধু তাই নয়, মধুবালা থেকে অনুষ্কা, কিংবা দিপীকা, বিভিন্ন সময় ভূত রূপে ধরা দিয়েছেন তাবড় তাবড় তারকারা৷ তবে ভূতের কথা হলেই সবার আগে যেন মনে পড়ে ‘ভূতের রাজা’র কথা।
আরও পড়ুন- কাঞ্চনের বাড়িতে প্রথমবার কালীপুজো, দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ‘বন্ধু’ শ্রীময়ী! ধারে কাছে নেই পিঙ্কি
‘‘ভূতের রাজা দিল বর, জবর জবর তিন বর’’— এহেন ভূতের সাক্ষাৎ পাওয়ার লোভ কমবেশি সব বাঙালির মনেই থাকে৷ তবে ক’জন ভূত আর তিন ইচ্ছাপূরণে হাজির হয়? ভূতের রাজার দয়া’য় কি বাসিতবে মন্ডা-মিঠাই, কোর্মা কালিয়া, পোলাও জোটে?
বড় পর্দায় ভূতের রাজার সঙ্গে বাঙালির পরিচয় ঘটিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়৷ তার পর সময়ের স্রোতে আন্তর্জাতিক ছবির পাশাপাশি বলিউডও জায়গা পাকা করে নেয় ভূতের ছবি৷ হরর ঘরানার এমন অনেক ছবি রয়েছে যা ছাপ ফেলে গিয়েছে৷
বলিউডে এমন কিছু হরর ছবির তালিকা তুলে ধরা হল, যা দেখে গায়ে কাঁটা দেবেই। অন্ধকার ঘরে টিভি, ল্যাপটপ বা মোবাইলের পর্দায় কোন ভূতকে দেখবেন, তা এই তালিকা থেকে বেছে নিতে পারেন৷
কামিনী— ১৯৪৯ সাল৷ মুক্তি পায় বলিউডের প্রথম ভূতের ছবি ‘মহল’। ছবির পরিচালক ছিলেন কমল আমরোহি৷ এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অশোক কুমার এবং মধুবালা। সেই সঙ্গে বলিউড পেয়েছিল তাঁর প্রথম ভূত ‘কামিনী’-কে।
কামিনী চরিত্রে অভিনয় করে মধুবালা দর্শকের মনে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন৷ তাঁর অভিনয় ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গানটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায়৷
বিনোদ— ১৯৫২ সালে মুক্তি পায় হিরেন বসুর ‘ঘুঙ্গরু’৷ ভয়ের পাশাপাশি এই ছবিতে ছিল ভরপুর কমেডি৷ এই ছবিতে ভূত ‘বিনোদ’-এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা ওম প্রকাশ।
মধুমতী— ভূতের ছবি হিসাবে বলিউডে প্রথম যে ছবিটি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল, তার নাম ‘মধুমতী’। ১৯৫৮ সালে মুক্তি পায় বিমল রায় পরিচালিত এই ছবিটি৷ এই ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার, প্রাণ, বৈজয়ন্তীমালা৷ ভূত ‘মধুমতী’ চরিত্রে ছাপ ফেলেছিলেন বৈজয়ন্তীমালা। ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন সলিল চৌধুরী।
সন্ধ্যা— ১৯৬৪ সালে আসে আরও একটি হরর মুভি ‘ওহ কৌন থি’৷ এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মনোজ কুমার, পারভিন চৌধুরি, হেলেন, প্রেম চোপড়া-সহ আরও অনেকে। ‘সন্ধ্যা’র (ভূত) চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সাধনা শিবদাসানি।
চিত্রসেন— ‘ওহ কৌন থি’ ছবি মুক্তির চার বছর পর বলিউডে ফের শিহরণ জাগাতে আসে রাম মাহেশ্বরীর ‘নীল কমল’ ছবিটি। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ওয়াহিদা রহমান, মনোজ কুমার, রাজ কুমার-সহ আরও অনেকে। এই ছবিটি মূলত রোম্যান্টিক থ্রিলার৷ যার পরতে পরতে ছিল গা ছমছমে দৃশ্য। ‘চিত্রসেন’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রাজ কুমার।
মুন্না বাবু— ১৯৮২ সালে মুক্তি পায় সিপি দীক্ষিতের ‘গজব’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে দেখা গিয়েছিল ধর্মেন্দ্র এবং এভারগ্রিন রেখাকে। ভয়ের সঙ্গে কৌতুকের ককটেলে পরিবেশিত হয়েছিল এই ছবিটি। মুন্না নামে ভূতের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র।
মার্কো— ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় রাজীব মেহড়ার ‘চমৎকার’৷ ছবিটি ছিল ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ব্ল্যাকবিয়ার্ডস ঘোস্ট’ ছবির গল্প থেকে অনুপ্রাণিত৷ এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ খান, উর্মিলা মাতন্ডকর, শম্মি কাপুর৷ আর মার্কো নামক ভূত চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ। এই ছবিটি সম্পূর্ণ ভাবে হরর ঘরানার নয়। এর সঙ্গে মিশে ছিল ফ্যান্টাসি এবং কমেডি৷
স্বাতী— ২০০৩ সালে রামগোপাল বর্মার হাত ধরে বলিউডে একটা যুগের পরিবর্তন ঘটে। ‘ভূত’ সিনেমায় স্বাতীর চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের একেবারে পিলে চমকে দিয়েছিলেন উর্মিলা মাতন্ডকর। এই ছবিতে দেখা গিয়েছিল অজয় দেবগন, রেখা, নানা পটেকর, তনুজার মতো তারকাদেরও৷
সঞ্জনা— ‘ভূত’-এর পর বলিউডে হরর ঘরানার ছবি হিসাবে রেকর্ড ভাঙে বিক্রম ভাটের ‘রাজ’৷ ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে সঞ্জনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিপাশা বসু৷ তাঁর অভিনয় দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এর পর ‘রাজ’ ছবির পরবর্তী পর্বও মুক্তি পায়৷ তবে সেগুলি প্রথম পর্বের মতো জনপ্রিয়তা পায়নি৷
মঞ্জুলিকা— রাজের পর বলিউডে নয়া চমক নিয়ে আসে ‘ভুল ভুলাইয়া’৷ ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন অক্ষয় কুমার, বিদ্যা বালন, শাইনি অহুজা, রাজপাল যাদব, পরেশ রাওয়াল, অমিশা প্যাটেলের মতো তারকারা৷ পরিচালক ছিলেন প্রিয়দর্শন৷ ছবির অন্তিম পর্বে মঞ্জুলিকার ভূমিকায় বিদ্যা বালনের অভিনয় দেখে শিহরণ জেগেছিল৷
শান্তি প্রিয়া— ওই বছরই মুক্তি পায় ফারহা খান পরিচালিত ‘ওম শান্তি ওম’। শাহরুখ খান, দীপিকা পাড়ুকোন, শ্রেয়স অভিনীত প্রেমের ছবির দ্বিতীয় ভাগে শান্তি প্রিয়া চরিত্রে দীপিকা পাড়ুকোন এমন ভয় ধরান যে দর্শক বহু দিন তা মনে রাখবে।
রুকসানা— ২০১৮ সালে মুক্তি পায় প্রসিত রায় পরিচালিত ‘পরী’ ছবিটি। এই হিন্দি ছবিতে দেখা গিয়েছিল টলিউড তারকা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতাভরী চক্রবর্তীকে৷ ‘রুকসানা’ চরিত্রকে এমন ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল যে, একা অন্ধকার ঘরে বসে এই ছবি দেখলে ভয়ে বুক ধুকপুক করবেই৷
হস্তর— ২০১৮ সালে আসে ‘তুম্বড়’ ছবিটি। ড্রামার সঙ্গে হররের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছিল এই ছবিতে।
বুলবুল— ২০২০ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ‘বুলবুল’৷ অনভিতা দত্তের পরিচালনা এবং অনুষ্কা শর্মার প্রযোজনায় এই ছবিটি অন্য মাত্রা পেয়েছিল।
লিসা— হরর ছবির কথা বলতে হলে ‘১৯২০’ ছবিটির কথা না উল্লেখ করলে নয়। ২০০৮ সালে বিক্রম ভাট পরিচালিত এই ছবির একাধিক দৃশ্য দর্শকদের ভয় ধরায়। লিসার দূরন্ত অভিনয় করেন অদা শর্মা৷
স্ত্রী— ২০১৮ সালে মুক্তি পায় রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কপূর, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, অপরাশক্তি খুরানা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত স্ত্রী ছবিটি৷ অমর কৌশিক পরিচালিত এই ছবিতে হাস্যরসে পরিপূর্ণ হলেও, ভয়ের পরিবেশও ছিল দুর্দান্ত৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>