কলকাতা: আলবিদা..! সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন বলিউডের তারকা শিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে৷ মঙ্গলের সন্ধ্যায় কলকাতার নজরুল মঞ্চে রখে গেলেন তাঁর শেষ সুরের ঝংকার৷ কিন্তু শিল্পীর মৃত্যুতে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন৷ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের একাংশের অপরিণামদর্শিতাই কি তাঁর মৃত্যুর কারণ? শুরু হয়েছে আলোচনা৷
আরও পড়ুন- VIDEO: ‘হায়ে, মর যাউ ইয়েহি পে…’ শেষ শোয়েই বলছিলেন কেকে
মঙ্গলবার রাতে আচমকা শিল্পীর মৃত্যুর খবরে হকচকিয়ে গিয়েছিল সুরের জগত। তৎক্ষণাৎ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক খুঁটিয়ে দেখা না হলেও কিছুক্ষণ পর থেকেই নেটমাধ্যমে পোস্ট হতে থাকে একের পর এক ভিডিয়ো, ছবি। গতকাল নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে যাঁরা গিয়েছিলেন, মূলত তাঁরাই এই পোস্টগুলি করতে শুরু করেন৷ তাতে দেখা যায় কেকে-র অনুষ্ঠানে ছিল বেলাগাম ভিড়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের জানিয়েছেন, অত ভিড় দেখে কেকে প্রথমে গাড়ি থেকে নামতে দ্বিধা করছিলেন। কোনওক্রমে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভিড় সরিয়ে সরাসরি গ্রিনরুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নজরুল মঞ্চ শুধু ভিড়ে ঠাসাই ছিল না৷ মঞ্চ জুড়ে ছিল আলোর ঝলকানি৷ একের পর এক গান গেয়ে চলেছিলেন কেকে৷ কিন্তু, গানের মাঝে মাঝে বারবার রুমাল দিয়ে মুখ-কপালের ঘাম মুছছিলেন শিল্পী৷ মাঝে মধ্যে মাথাতেও বোলাচ্ছিলেন ওই রুমাল৷ বারবার মঞ্চের পিছনে গিয়ে ছোট বোতলে রাখা জল ঢালছিলেন গলায়৷ তবে কি গান গাইতে গাইতেই অসুস্থ বোধ করছিলেন কেকে? কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়েই পারফর্ম করে যান? মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে কেকে-র লাইভ অনুষ্ঠানের একাধিক ভিডিয়োতে ধরা পড়েছে সেই ছবি৷ মঞ্চে উপস্থিত অনেকেই বলেছেন, গান গাইতে গাইতে দরদর করে ঘামছিলেন কেকে৷
যদিও অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে তিনি ছিলেন চনমনে৷ মঞ্চের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত দাপিয়ে বেড়িয়েছেন৷ তারই মাঝে বারবার চলে যাচ্ছিলেন মঞ্চের পিছনে৷ ঘাম মুছে নিয়ে খাচ্ছিলেন জল৷ একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, কেকে মুখ মুছে মাথার চুলে আঙুল চালিয়ে ফের মাইক হাতে গান গাইতে যাচ্ছেন৷ সেই সময় মঞ্চের পাশ থেকে একজন হিন্দিতে বলে ওঠেন প্রচণ্ড গরম৷ কেকে তাঁর দিকে তাকিয়ে ইশারায় সম্মতি জানান৷ এর পরেই মঞ্চের উপরের আলোগুলো নিভিয়ে দিতে বলেন শিল্পী৷ তার পর ফের গান৷ তাঁর সুরেলা কন্ঠের জাদুতে তখন বুঁদ দর্শককুল৷ মঙ্গলবার রাতে মঞ্চ থেকে নামার আগে তিনি গান, ‘ইয়ারো দোস্তি বড়ি হি হাসিন হ্যায়, ইয়ে না হো তো কেয়া ফির বোলো ইয়ে জিন্দগি হ্যায়…’ । এই গানটি গাইতে গাইতেই সম্ভবত অসুস্থ বোধ করতে থাকেন কেকে৷
কালো পোশাক পরা নিরাপত্তারক্ষীরা যখন কেকে-কে স্টেজের বাইরে বার করে আনছেন, তখন দৃশ্যতই তিনি বিধ্বস্ত৷ চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ৷ কোথাও যেন মিলিয়ে গিয়েছে মুখের সেই মিষ্টি হাসি৷ তখনও দরদর করে ঘামছেন৷
মঞ্চে গান গাইতে গাইতেই বারবার সহ শিল্পীদের বোঝাতে চেয়েছিলেন তাঁর গরম লাগছে৷ কিন্তু থামেনি তাঁর কন্ঠ৷ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মাতিয়ে রাখেন গুরুদাস কলেজের ‘ফেস্ট’৷ মাঝে ১০ মিনিটের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন শুধু৷ তার পর ফের মাইক হাতে সুরের মুর্ছনা৷ অসুস্থতা সত্ত্বেও ছয় থেকে সাত হাজার শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন মায়া ভরা কন্ঠে৷ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বিরাজ করেছেন সুরের জগতে৷
চিকিৎসকরা প্রথমিকভাবে মনে করছেন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে শিল্পীর। তবে এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসেনি৷ নজরুল মঞ্চে উপস্থিত অনেকেরই অভিযোগ, হলে ঠিকঠাক মত কাজ করছিল না এসি৷ ভিড়ের চাপে দমবন্ধ লাগছিল৷ কুলকুল করে ঘামছিলেন শিল্পীও৷ চিকিৎসকরা বলছেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কোনও আগাম সঙ্কেত দিয়ে আসে না৷ গরম কালেও এটা রোগ হতে পারে৷ হৃদ্স্পন্দন অনিয়মিত হতে শুরু করলেই বাড়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি৷
মঙ্গলবার যে নজরুল মঞ্চে অত্যাধিক ভিড় ছিল, সে কথা জানিয়েছেন শিল্পী শুভলক্ষ্মীও৷ তিনি বলেন, এসি বন্ধ ছিল না চলছিল বোঝা যাচ্ছিল না৷ তবে ক্রমাগত দরজা খোলা ও বন্ধ করা হচ্ছিল৷ প্রচুর লোক ঢুকছিল৷ ওঁকে (কেকে) দেখেই মনে হচ্ছিল, প্রচণ্ড গরম লাগছে৷ এই ঘটনার পর বুধবার সকালে চিকিৎসক কুণাল সরকার নিজের ফেসবুক পেজে প্রয়াত শিল্পীর একটি সাদা-কালো ছবি পোস্ট করেন৷ সেখানে তিনি লেখেন, ‘যতটা দুঃখ, ততটাই লজ্জার। বেসামাল ভিড়। এসি বেহাল-ভীষণ গরম। মুখের উপর ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার স্প্রে করা। দু’ঘন্টার উপর সময় নষ্ট করে তার পর শেষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। আমাদের ক্ষমা করো।’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>