মুম্বই: সঙ্গীত জগতে তিনি এক উজ্বল নক্ষত্র৷ তাঁর কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ আপামর বিশ্ব৷ অনুরাগীদের মনের মনিকোঠায় তাঁর বাস৷ তবে তাঁর জীবন নেহাতই সাদামাঠা৷ ইন্ডাস্ট্রির কোনও বিষয়েই সাতে-পাঁচে থাকেন না তিনি৷ জুটঝামেলা তাঁর না-পসন্দ৷ কিন্তু, জানেন কি সেই অরিজিৎ সিংকেও একবার পোহাতে হয়েছিল বিস্তর ঝক্কি৷ ভাইজানের রোষের মুখে পড়ে রাতারাতি শেষ হতে বসেছিল তাঁর কেরিয়ার৷ সলমানের মুখের উপর জবাব দিয়ে তাঁর রোষানলে পড়েছিলেন গায়ক৷ বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁর রেকর্ড করা গান৷ বহু চেষ্টাতেও মন গলেনি ভাইজানের৷
আরও পড়ুন- সাদা স্প্যাগেটিতে স্পষ্ট বুকের খাঁজ, টোনড উরু ফ্লন্টস করে হটনেসে ঝড় মালাইকার
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে একটি অ্যাওয়ার্ড ফাংশনকে কেন্দ্র করে৷ স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে সাদামাঠা পোশাকে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন অরিজিৎ৷ পায়ে হাওয়াই চটি৷ তারকা বেষ্টিত ওই শোয়ে অরিজিতের পোশাক ছিল নেহাতই বেমানান৷ তিনি যখন মঞ্চে পুরস্কার নিতে ওঠেন, তখন তাঁকে দেখে কটাক্ষ করেন সলমান খান৷ সাল্লু ভাই বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে এসেছ!’’ চুপ থাকেননি অরিজিৎও৷ তিনি বলেন, ‘‘কী আর করব, আপনারা সবাই মিলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন৷’’ ইন্ডাস্ট্রির তথাকথিত ‘বস’ যে অরিজিতের এই ‘ঔদ্ধত্য’ ভালো নজরে দেখেননি, তা বোঝা গিয়েছিল কিছুদিন পর৷
সলমান খান ও অনুষ্কা শর্মা অভিনীত ‘সুলতান’ ছবির ‘জগ ঘুমেয়া’ গানটি গাওয়ার কথা ছিল অরিজিতের৷ ওই গানটি রেকর্ডও করা হয়ে গিয়েছিল তাঁর৷ কিন্তু আচমকাই বাদ পড়ে তাঁর কণ্ঠ৷ পরে ওই গানটি গাওয়ানো হয় রাহত ফতেহ আলি খানকে দিয়ে৷ পুরনো বিতর্কের জেরেই যে এই সিদ্ধান্ত তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি সিনেপ্রেমীদের৷ এই ঘটনার পর ভেঙে পড়েছিলেন অরিজিৎ৷ বহু বার বহু ভাবে তিনি সলমানের মান ভঞ্জনের চেষ্টা করেন৷ নিজের স্টারডম ভেঙে রীতিমতো কাকুতি মিনতি করেন৷ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অরিজিৎ লেখেন, ‘‘আমি আপনাকে অনেক বার ফোন করেছি, মেসেজ পাঠিয়েছি৷ আমি আপনাকে অপমান করতে চাইনি৷’’ অরিজিৎ আরও বলেন, ‘‘আপনি আমার কথায় অপমানিত হয়েছেন, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি৷ আমাকে ক্ষমা করে দিন৷ আমি ও আমার পরিবার আপনার অন্ধ ভক্ত৷ আমি বহুবার আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু আপনি বুঝতেই চাইছেন না৷ কতবার ক্ষমা চেয়ে মেসেজ করেছিল, আপনি হয়তো সেটাও জানেন না৷’’
অরিজিৎ-এর মিনতি ছিল, সুলতানে তাঁর ভর্সনটা যেন রাখা হয়৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি আপনার জন্য একটা গান গেয়েও ছুটি নিতে পারি৷ আমার এই অনুভূতিটা কেড়ে নেবেন না৷’’ অনেক সাধ্যসাধনা করলেও সলমানের মন কিন্তু গলেনি৷ এর পর থেকে আর কোনও ছবিতেই অরিজিৎকে দিয়ে তিনি গান গাওয়াননি৷ অন্যদিকে, অরিজিৎও তাঁর এই দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট এক ঘণ্টা রেখেই ওয়াল থেকে মুছে ফেলেছিলেন৷ কিন্তু কেন? তা আজও রহস্য৷ এর কারণ কোনও দিনই জানননি শিল্পী৷
পরে অরিজিৎকে বাদ দেওয়া নিয়ে নিজের গা থেকে দায় ঝেড়ে সলমান বলেছিলেন, কোন গায়ককে দিয়ে গান গাওয়ানো হবে সেটা নির্ভর করে প্রজোযক ও পরিচালকের উপর৷ কাকে বাদ দেওয়া হবে, কাকে রাখা হবে, সেটা তাঁরা ঠিক করবেন, আমি না৷ কিন্তু, সলমন যে ছবিতে অভিনয় করেন, সেই ছবিতে তাঁর কথাই যে শেষ, সেটা কারও অজানা নয়৷ তবে সেই ঝড় এখন অতীত৷ নিজের সুরের জাদুতে সকলের মন জিত চলেছেন অরিজিৎ৷ মুম্বইয়ে কাজ করলেও নিজের শান্তি খুঁজে নিয়েছেন জিয়াগঞ্জে পরিবারের মধ্যে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>