কলকাতা: তিনি রিয়্যাল ফাইটার৷ তাঁর সামনে দু’বার হার মেনেছিল মারণরোগ ক্যানসার। মৃত্যুকে হার মানিয়ে তিনি ফিরে এসেছিলেন ফিনিক্স পাখির মতো৷ এই কঠিন লড়াইয়ের কাহিনি নজর কেড়েছিল সকলের। তাঁর লড়াকু মনোভাবকে কুর্নিশ জানিয়েছিল তাঁর অগণিত অনুগামী। এবারও আশা ছিল অলৌকিক কিছু ঘটবে৷ কিন্তু মিরাকেল হল না৷ মৃত্যুর কাছে হার মানলেন বাংলা টেলিভিশন দুনিয়ার চর্চিত মুখ ঐন্দ্রিলা শর্মা।
আরও পড়ুন- ছোট থেকেই বাঁচার লড়াই! হাসপাতালের বেডে শুয়েই ক্লাস ইলেভেনের পরীক্ষা দিয়েছিল ঐন্দ্রিলা
দু’বার ক্যানসারকে হার মানিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু আচমকাই ঘটল ছন্দপতন৷ ১ নভেম্বর হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। ১ নভেম্বর ২০২২ থেকে ২০ নভেম্বর ২০২২— টানা লড়াই৷ অবশেষে নেভে জীবন প্রদীপ। কিন্তু কেমন ছিল এই ২০ দিনের লড়াই?
খবরের কাগজ থেকে টিভির পর্দা, কিংবা অনলাইন সংবাদমাধ্যম, এই ২০ দিন ধরে প্রতিনিয়ত ঐন্দ্রিলাকে খুঁজেছে আপামর রাজ্যবাসী৷ কেমন আছেন ঐন্দ্রিলা? একটাই প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে সকলের মনে৷ যাঁরা হয়তো কোনও দিন ঐন্দ্রিলার অভিনয় দেখেননি, তাঁরাও প্রার্থনা করেছেন অভিনেত্রীর জন্যে৷
২৪ বছরের একটা লড়াকু মেয়ের ক্যান্সার জয়ের কাহিনী সকলের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল৷ আর ঐন্দ্রিলার গোটা লড়াইয়ে যে মানুষটি তাঁকে সবচেয়ে বেশি আগলে রেখেছিলেন, সেই সব্যসাচী চৌধুরীকে নিয়েও বিস্তর চর্চা হয়েছে। তাঁদের এই গভীর ভালবাসাকে সেলাম জানিয়েছে অগুনতি মানুষ। ঐন্দ্রিলা যখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, তখন সব্যসাচী লিখেছিলেন, অলৌকিকের জন্য প্রার্থনা করুন…৷ কিন্তু সেই অলৌকিক ঘটল না। নিয়তির কাছে হার মানতে হল ঐন্দ্রিসালাকে৷
১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পরই ঐন্দ্রিলাকে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সে দিন থেকেই কোমায় ছিলেন ঐন্দ্রিলা। অভিনেত্রীর সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে দেখা যায়, ঐন্দ্রিলার মাথার বাঁ দিকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। ভেন্টিলেটরে রেখে চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর।
ঐন্দ্রিলার মাথায় জটিল অস্ত্রোপচারও করেন চিকিৎসকরা। বায়োপসি রিপোর্টে দেখা যায়, ঐন্দ্রিলার ‘ইউয়িংস সারকোমা’ হয়েছে। এটা এক ধরনের ক্যানসার। যা দ্রুত ঐন্দ্রিলার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে৷ এই রোগ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ।
লড়াই কঠিন জেনেও হাল ছাড়েননি চিকিৎসকরা। নিউরোসার্জেন, নিউরোলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট, সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট-সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ঐন্দ্রিলার চিকিৎসায় তৈরি হয় একটি দল৷ তাঁরা সব রকম চেষ্টা চালিয়েছিলেন৷ কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রবিবার না ফেরার দেশে পাড়ি দেন ঐন্দ্রিলা৷
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অস্ত্রোপচারের পর ভেন্টিলেটরে ঐন্দ্রিলার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। আশার আলো দেখেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের ১০ দিন পর ফের তাঁর মাথার বাঁ দিকে স্ট্রোক হয়। পরে মাথার ডান দিকে আবার স্ট্রোক হয়। বারবার স্ট্রোকের ধাক্কায় ক্রমেই ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
এরই মধ্যে একাধিক বার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। পুরোপুরি চেতনা হারান তিনি। ভেন্টিলেটর সাপোর্টে চলছিল শ্বাস৷ ঐন্দ্রিলার চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও পরামর্শ নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সব চেষ্টাই যে বিফল হয়ে গেল।
১৯ নভেম্বর, শনিবার সন্ধ্যায় হার্ট অ্যাকাট। ‘মাইল্ড কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে’ আক্রান্ত হন অভিনেত্রী৷ তার পর থেকে অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হতে থাকে। রবিবার আবার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা। তবে আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। রবিবার দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিট৷ লড়াই থামল ঐন্দ্রিলার। আর ফিনিক্স হয়ে ফেরা হল না ‘ফাইটার’-এর!
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>