কলকাতা: লড়াই, শুধু লড়াই৷ গোটা জীবনটাই যেন সংগ্রামের উপাখ্যান৷ ক্ষুদ্র এই জীবনে বারবার এসেছে মৃত্যুর হাতছানি৷ কিন্তু, তিনিও হার মানার পাত্রী নন৷ অদম্য মনের জোরে ফিরে এসেছেন ফিনিক্স পাখির মতো৷ কিন্তু, রবিবার ইতি পড়ল সেই সংগ্রামের অধ্যায়ে। হার-জিতের প্রশ্নই নেই৷ কারণ অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা চলে গিয়েও থেকে গেলেন সকলের মনের মনিকোঠায়। তবে চোখের জল বাধ মানছে না পরিবার-বন্ধু-অনুরাগীদের। শোকে পাথর ভালোবাসার মানুষ সব্যসাচী চৌধুরী৷
আরও পড়ুন- ঐন্দ্রিলার পায়ে প্রণাম, চুম্বন এঁকে চোখের জলে শেষ বিদায় সব্যসাচীর
অভিনেত্রীর ছোটবেলাটা কেটেছিল মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে৷ সেখানে ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার চারতলা বাড়িটার নেমপ্লেটে বাবা, মা আর দিদির সঙ্গে আজও জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম। হাসিখুশি সেই মেয়েটা যে এভাবে চলে যাবে, সেটা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না পুরনো বাড়ির প্রতিবেশীরা৷ জুলাই মাসে শেষবার বহরমপুরে গিয়েছিলেন৷ পুজোতে যাওয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি৷ পুজোর পর তিনি যে এভাবে বিদায় নেবেন, সেটা কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি৷
ঐন্দ্রিলা ও তাঁর দিদি ঐশ্বর্য দু’জনেই ছিলেন বহরমপুরের কাশীশ্বরী গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী৷ ২০১৫ সালে একাদশ শ্রেণিতে থাকাকালীন প্রথম ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। জন্মদিনের দিন জানতে পারেন তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত৷ সেই সময় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ঐন্দ্রিলা৷ কিন্তু হার মানেননি৷ স্কুলে গিয়েই পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা চৈতালী চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘ঐন্দ্রিলার লড়াই ছোট থেকেই৷ অসুস্থ অবস্থাতেই একাদশের দুটো পরীক্ষা স্কুলে গিয়ে দিয়েছিল সে৷ এর পর ওকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ তবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ঐন্দ্রিলা জানায়, হাসপাতালের বেডে শুয়েই ও পরীক্ষা দেবে। আর সেটা করেওছিল।’
অন্যদিকে, ঐন্দ্রিলার নাচের প্রশিক্ষক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমার কাছেই ওর নাচের হাতেখড়ি৷ কোনও দিন দ্বিতীয় বার দেখিয়ে দিতে হয়নি৷ সাত-আট বছর আমার কাছেই নাচ শিখেছে।’ তিনি জানান, বহরমপুরে তখন রিয়্যালিটি শো চলছে৷ সেই সময়ও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু, তিনি জানিয়ে দেন, অডিশনে যোগ দেবেন। সেই রিয়্যালিটি শো থেকেই রূপোলি পর্দার এসেছিল কাজের সুযোগ।
প্রথমবার বোনম্যারো ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। সেখান থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার পর অংশ নেন নাচের রিয়্যালিটি শো-তে। সেখান থেকেই আসে ঝুমুরে অভিনয় করার সুযোগ। ওখান থেকেই পরিচয় হয় সব্যসাচী চৌধুরীর সঙ্গে৷ যদিও শুরুটা হয়েছিল বন্ধুত্ব দিয়েই। পরে প্রেম৷ ঐন্দ্রিলার জনপ্রিয়তা আসে ‘জিয়ন কাঠি’ থেকে। ওই ধারাবাহিকে কাজ করতে করতেই দ্বিতীয়বার তাঁর শরীরে থাবা বসায় মারণরোগ৷ ফুসফুসে দেখা যায় বড় টিউমার। সেবারও কঠিন লড়াই চালিয়ে ফিরেছিলেন মৃত্যুর মুখ থেকে৷ ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী৷ তার পর হৃদরোগে৷ শনিবার রাতে পরপর ১০ বার হার্ট অ্যাকাট হয় তাঁর৷ রবিবার দুপুরে শেষ হয় তাঁর লড়াই৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>