জলপাইগুড়ি: আচমকা একটা দমকা হওয়া যেন সব ওলট-পালট করে দিয়ে গিয়েছে৷ একটি মহামারি এসে কেড়ে নিয়েছে ওদের শৈশব৷ যাঁরা পিঠে ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেত, আজ তাদের কাঁধে চেপেছে সংসারের বোঝা৷ কেউ বেচছে নানাবিধ শাক, কেউ আবার বকফুল৷ উত্তরবঙ্গের হাট-বাজারে গেলেই দেখা মিলবে এই সকল স্কুল ছুট কচিকাচাদের৷ বাবুদের কাছিকাছি ঘোরাফেরা করে ওরা৷ বলে দোকানের থেকে সস্তা হবে, নেবেন বাবু?
আরও পড়ুন – অভিষেকের খাস তালুকে দাঁড়িয়ে ‘দুর্নীতিমুক্ত’ সরকার গড়ার ডাক সিদ্দিকির
সত্যই খুব সামান্য দামেই এই সব শাক-বকফুল বিক্রি করে খুদে বিক্রেতারা৷ যে টুকু পয়সা আসে, তাতেই লাভ৷ সংসারে কিছু উপকার তো হবে৷ লকডাউনের পর থেকে বন্ধ স্কুল৷ অনলাইন কী, তা তারা জানে না৷ উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটার অধিকাংশ শিশু-কিশোরই এখন পড়াশোনা শিকেয় তুলে সংসারের হাল ধরেছে৷ অনকেই গ্যারেজের কাজে ঢুকেছে৷ কেউ আবার মালিকের হয়ে পথে ঘুরে ঘুরে লটারি বিক্রির কাজ করছে৷ বদলে কিছু টাকা হাতে গুঁজে দেয় মালিক৷ বইয়ের পাতা উলটানো হাত আজ কাগজ কুড়ায়৷ পঞ্চম, অষ্টম এবং দশম শ্রেণিতে স্কুল ছুট আটকাতেই মিড-ডে মিলের বন্দোবস্ত করেছিল রাজ্য শিক্ষা দফতর৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল৷ এই উদ্যোগের ফলে স্কুল ছুটের সংখ্যা কিছুটা কমেওছিল৷ কিন্তু লকডাউন সবটাই পন্ড করে দিয়েছে৷ বদলে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের ছবি৷ দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলেও হয়তো দেখা মিলবে একই পরিস্থিতির৷
আরও পড়ুন- বাড়ছে সংক্রমণ, ফের বন্ধ বিভিন্ন রাজ্যের স্কুল, জারি রাত্রিকালীন কার্ফু
ফুটপাতে বসে মোবাইলের হেডফোন বিক্রি করা এক কিশোর বলে, বাবা অসুস্থ৷ অভাবের সংসারে হাড়ি চড়ে না৷ তাই বাধ্য হয়েই কাজে নেমেছি৷ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে সে৷ কিন্তু হয়তো এখানেই শেষ৷ আর কোনও দিনই স্কুলে ফেরা হবে না তার৷ বয়ে চলতে হবে সংসারের হাল৷ আবার রাজ্যে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই আজ বেকার৷ তাঁদের ঘরের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কাজ জুটিয়েছে চা বাগানে৷ দেখতে গেলে সবচেয়ে বেশি স্কুলছুট রয়েছে চা বাগান লাগোয়া এলাকাগুলিতেই৷ এই সকল স্কুল ছুট বাচ্চাগুলোর জন্য বিশেষ পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ প্রথম প্রথম এই কোচিং সেন্টারে তাদের হাজিরা চোখে পড়লেও, এখন আর তাদের দেখা মেলে না৷
সারা দেশে স্কুল ছুটের সংখ্যা সবচেয়ে কম বাংলাতেই৷ ২০২০ সালের ‘অ্যানুয়াল স্টেট অফ এডুকেশন রিপোর্ট’ অনুসারে বঙ্গে স্কুল ছুট ১.৫ থেকে ৩.৩ শতাংশ৷ সারা ভারতে এই সংখ্যাটা ৪ থেকে ৫.৫ শতাংশ৷ রাজ্যে স্কুল ছুটের সংখ্যা কমাতে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷ গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরা যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে জন্য স্কলারশিপ চালু করা হচ্ছে৷