কলকাতা: অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে তাঁদের, এই অভিযোগ তুলে বিকাশ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন ৫ জন শিক্ষিকা। হঠাৎ সেই ৫ জন ‘বিষ’ খেয়ে নেন বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাঁদের বিধাননগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের মধ্যে দুই জনকে এনআরএস এবং তিন জনকে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আপাতত ওখানেই তাঁরা চিকিৎসাধীন। এরা সকলেই এসএসকে এবং এমএসকে শিক্ষিকা এবং ‘শিক্ষক ঐক্য মঞ্চে’র সদস্য বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘বিগ বসে’র ঘরে উদ্দাম যৌনতা, অন ক্যামেরা সঙ্গম’, বিস্ফোরক দাবি উরফির
বিক্ষোভকারীদের মূল অভিযোগ, লাগাতার আন্দোলন করার ফলে তাঁদের অনৈতিকভাবে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদেই তাঁরা আজ এখানে আরও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে আসেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তিও হয়। আন্দোলন করতে করতেই হঠাৎ তাঁরা ‘বিষ’ খেয়ে নেন বলে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গেও দেখা করতে চান তাঁরা। আন্দোলনকারীদের একজন জানাচ্ছেন যে তাঁকে হঠাৎ দিনহাটায় বদলি করে দেওয়া হয়েছে জা হওয়ার কথা ছিল না কখনই। ‘আত্মহত্যা’ করে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করতে চান বলেই জানিয়েছেন। তাঁদের তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, যে তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ৫০ বছরের ওপরে তা সত্ত্বেও তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় ৬৮ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে বদলি করা হয়েছে যেটা বেআইনি। এই ইস্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বিজেপি বলেছে যে, রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ত্রিপুরা যেতে পারছেন কিন্তু আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই তাঁর। এদিকে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, চাকরি করতে গেলে বদলি হতে হয়। সমস্যা হলে সরকার দেখে নেবে। তবে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন কুণাল। তবে এই ঘটনায় কোনও ‘প্ররোচনা’ দেওয়া হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন- এবার ‘দুয়ারে’ই মিলবে স্বাস্থ্য সুবিধা, নয়া প্রকল্প রাজ্যের
এদিকে, মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র এক বিবৃতিতে বলেন, যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক শিক্ষা কর্মী সহ গণতন্ত্রপ্রেমী সাধারণ মানুষ সরকারি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুললে তার উপর পুলিশ ও প্রশাসনের অত্যাচার নেমে আসছে, অগণতান্ত্রিকভাবে বলপূর্বক বাড়ি থেকে দূরবর্তী জায়গায় তাদের বদলি করা হচ্ছে, এর প্রতিবাদ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে গেলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তা প্রশাসনিক ফ্যাসিবাদী পদক্ষেপ ছাড়া অন্য কিছু নয় । তাঁরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এই প্রশাসনিক ফ্যাসিবাদী পদক্ষেপের ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষক শিক্ষা কর্মী সহ তার সাথীদের যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় তবে এর জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে। তাঁরা রাজ্যের সকল গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন যাতে তাঁরা এই প্রশাসনিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান ও তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলেন।
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘বিকাশ ভবনের সামনে বাধ্যতামূলক বদলির সরকারি নির্দেশ নামা পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা শিক্ষা জগতের একটি কলঙ্কজনক ঘটনা! আন্দোলনকারী চুক্তিভিত্তিক নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে শাস্তি স্বরূপ উত্তরবঙ্গে বদলির সরকারি সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’’