বিপুল ঋণের বোঝা, ঝুঁকে গিয়েছে কাঁধ! তৎপর RBI, ‘অশনি সঙ্কেত’ মিলেছিল অন্য রিপোর্টেও

বিপুল ঋণের বোঝা, ঝুঁকে গিয়েছে কাঁধ! তৎপর RBI, ‘অশনি সঙ্কেত’ মিলেছিল অন্য রিপোর্টেও

কলকাতা: আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চে’র রিপোর্টে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাণিজ্যিক মহলে৷ রাতারাতি ধস নেমেছে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ার দরে। ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চে’র রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক দশক ধরে শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই বিপর্যয়ের মুখে আদানি গোষ্ঠী৷ তবে আদানি গোষ্ঠীর সামনে যে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আসতে চলেছে, সেই অশনি সঙ্কেত আগেই মিলেছিল অন্য এক সংস্থার রিপোর্টে৷ 

আরও পড়ুন- আদানি ‘ডুবলে’ কি LIC পার পাবে? আতঙ্কের মধ্যে বার্তা দিল কর্তৃপক্ষ

২০২২ সালটা ছিল গৌতম আদানির৷ এক লাফে অনেকটা বেড়েছিল তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ৷ কিন্তু প্রদীপের নীচেই ছিল অন্ধকার৷ ২০২৩-এর শুরুতেই গ্রাস করল সেই আধার৷ গত বছর অগাস্ট মাস নাগাদ মুকেশ অম্বানীকে পিছনে ফেলে দেশের সব থেকে ধনী ব্যক্তি হিসাবে নিজের জায়গা পাকা করে নেন গৌতম আদানি। তিনি তখন এশিয়ারও ধনীতম ব্যক্তি৷ সেই সঙ্গে গোটা বিশ্বের বিত্তশালীদের তালিকায় তিনি উঠে আসেন তৃতীয় স্থানে৷ কিন্তু সেই সময়ই ‘ক্রেডিট সাইট’-এর এক সমীক্ষায় উঠে আসে চমকে দেওয়ার মত তথ্য। ‘ক্রেডিট সাইট’-এর ওই সমীক্ষার দাবি করা হয়, আদানি গোষ্ঠীর এই চোখ ধাঁ ধানো সাফল্যের পিছনে রয়েছে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই সময় আদানির ঋণের পরিমাণ প্রায় ২.২২ লক্ষ কোটি টাকা৷ 

আরও গভীরে গিয়ে ওই সমীক্ষায় বলা হয়, গত বছর বিশ্ব বাজারে আদানির ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৫২ লক্ষ কোটি টাকা। এক বছরে সেই ঋণের পরিমাণ কমার বদলে ৪২ শতাংশ বেড়ে ২.২২ লক্ষ কোটি টাকা হয়ে যায়। এই বিপুল ঋণের ভার আদানি গোষ্ঠীর উপর খাড়ার ঘা হয়ে নেমে আসতে পারে বলেও সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছিল৷ তারা জানিয়েছিল, বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে শাখা বিস্তার করতে আদানি গোষ্ঠী যে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তাতে তাদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে৷ ঋণ নিয়েই আদানিরা পৌঁছে গিয়েছিল বিদ্যুৎ এবং গ্রিন এনার্জিতে। আদানির এই রমরমা দেশ-বিদেশের খ্যাতনামী ব্যবসায়ী সংস্থারও নজর কাড়ে৷

সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছিল, আদানির বিদেশি মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। সেই সময় শোনা যায়,  বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) কাছ থেকে নতুন করে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেছেন আদানি। 

আদানির সাম্রাজ্য যখন টলমল করছে, তখন তথ্য জানতে তৎপর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া৷ আদানি গোষ্ঠীর কাছে কোন ব্যাঙ্কের কত টাকা আছে, ব্যাংকগুলির কাছে সেই তথ্য জানতে চাইল আরবিআই৷ দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কের কাছ থেকে এই তথ্য চাওয়া হয়েছে৷ এদিকে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের ধাক্কায় দিশেহারা অবস্থা আদানি গোষ্ঠীর৷ এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের প্রধান সংস্থার সমস্ত সাবস্ক্রাইব করা শেয়ারের বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷

এলআইসি ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রেখেছে আদানি গোষ্ঠী৷ এই অবস্থায় আদানিরা ডুবলে প্রবল সমস্যার মুখে পড়বে জীবন বিমা সংস্থা ও ব্যাঙ্কগুলি৷ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে সাধারণ মানুষ৷ যাঁদের সঞ্চয়ের টাকা গচ্ছিত রয়েছে এলআইসি ও এই সকল ব্যাঙ্কে৷ এই পরিস্থিতিতে আরবিআই কোনও কঠিন পদক্ষেপ করতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ 

এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আদানি গোষ্ঠী সফলভাবে সমাপ্ত ২০,০০০ কোটি টাকার ফলো-অন পাবলিক অফার (FPO)প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। সংস্থার তরফে জানানো হয়, টালমাটাল বাজারে বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। সে কারণেই সম্পূর্ণ সাবস্ক্রাইব হওয়ার পরেও FPO মুলতুবি করা হল। বিনিয়োগকারীরা সমস্ত টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন৷ আদানি এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “অভূতপূর্ব পরিস্থিতি এবং বর্তমান বাজারের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির লক্ষ্য এফপিও আয় ফেরত দিয়ে এবং সম্পূর্ণ লেনদেন প্রত্যাহার করে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।”