মাত্র ২৭ বছরেই ১০ হাজার কোটির সংস্থার মালিক! নিজের প্রতিষ্ঠান থেকেই বহিষ্কৃত বঙ্গতনয়া

মাত্র ২৭ বছরেই ১০ হাজার কোটির সংস্থার মালিক! নিজের প্রতিষ্ঠান থেকেই বহিষ্কৃত বঙ্গতনয়া

নয়াদিল্লি:  বয়স তখন মাত্র ২৩৷ পুঁজি বলতে ছিল ২১ লক্ষ টাকা৷ সেই টাকা দিয়েই শুরু করেন ব্যবসা৷ যা মাত্র চার বছরে ফুলেফেঁপে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮০০ কোটিতে। যে বয়সে কেরিয়ার গড়তে ছেলে মেয়েরা হিমশিম খায়, সেই বয়সে কার্যত একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি৷ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখান ২৭ বছরের বঙ্গতনয়া অঙ্কিতি বসু। কিন্তু সব পেয়েও এক লহমায় সব হারানোর মুখে ফ্যাশন ই-কমার্স সংস্থা ‘জিলিঙ্গো’-র মালিক তথা সহ প্রতিষ্ঠাতা৷ নিজের প্রতিষ্ঠান থেকেই বহিষ্কৃত অঙ্কিতি৷ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ৷ 

আরও পড়ুন- টালমাটাল শিশির অধিকারীর সাংসদ পদ, সাক্ষ্য দিতে ডাকা হল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে

ankiti

যদিও অঙ্কিতি ঘনিষ্ঠদের দাবি, ম্যানেজমেন্টের হেভিওয়েট একজনের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ আনার ‘শাস্তি’ এটা৷ প্রথমে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি৷ লাভ না হওয়ায় আইনি পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হন৷ সেই আঁচ পেয়েই বহিষ্কার করা হয় অঙ্কিতিকে৷ 

বাঙালি পরিবারে জন্ম হলেও, অঙ্কিতির বেড়ে ওঠা বাণিজ্যনগরীতে। ২০১২ সালে মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে অর্থনীতি ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা তাঁর৷ কলেজের পাঠ শেষ করে যোগ দেন চাকরিতে৷ প্রথমে মার্কিন কনসাল্টিং সংস্থা ম্যাকিনজির মুম্বই শাখায়। পরে সেখান থেকে চলে যান অন্য একটি মার্কিন সংস্থা সেকোয়া ক্যাপিটালসের বেঙ্গালুরু অফিসে৷ 

অঙ্কিতি

অঙ্কিতির বয়স তখন ২৩৷ অফিসেই পরিচয় হয় বছর ২৪-এর ধ্রুব কাপুরের সঙ্গে৷ আইআইটি গুয়াহাটির ছাত্র৷ পড়াশোনা সেরে গেমিং স্টুডিয়ো কিউয়ি আইএনসি-তে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজে যোগ দেন তিনি৷ দু’জনেই স্বপ্ন দেখতেন নিজের কিছু করার৷ দু’জনেই ভাবতে থাকেন ই-কমার্স সাইট খুললে কেমন হয়৷ কিন্তু ভারতে তখন রমরমিয়ে ব্যবসা করেছে ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজনের মতো নামিদামি সংস্থা৷ প্রতিযোগিতাও বেশি৷ তাই অন্যত্র ব্যবসা শুরুর চিন্তাভাবনা করতে থাকেন অঙ্কিতি এবং ধ্রুব। সেই সময় ব্যাঙ্কক বেড়াতে যান অঙ্কিতি।  সেখানে চতুচক বাজারে ঢুকে স্থানীয় ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক, জুতো, ব্যাগ এবং অ্যাকসেসরিজ দেখে তিনি একেবারে হতবাক৷ সেখানকার তৈরি জিনিস নজর কাড়ে তাঁর৷ বুঝতে পারেন, ভাষাগত সমস্যার জন্য স্থানীয় ডিজাইনাররা তাঁদের তৈরি সামগ্রী বাইরে পৌঁছে দিতে পারছেন না৷ ফলে আর্থিক ভাবেও পিছিয়ে পড়ছেন৷ 

অঙ্কিতি

সেখান থেকেই চোখ খুলে যায় বঙ্গতনয়ার৷ দেশে ফিরেই ধ্রুবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দু’জনেই৷ এর পর ২১ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে কাজে নেমে পড়েন৷ তবে কাজটা ততটাও সহজ ছিল না৷ প্রায় ১ বছর ধরে মার্কেট রিসার্চ করেন ধ্রুব-অঙ্কিতি৷  ব্যাঙ্ককের বাজারে ঘুরে ঘুরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনলাইন ব্যবসায় আগ্রহ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন৷ বেঙ্গালুরুতে বসে প্রযুক্তিগত দিকটা সামলানোর দায়িত্ব নেন ধ্রুব। আর দেশের বাইরে  যাবতীয় কাজকর্ম সামলানোর দায়িত্ব নেন অঙ্কিতি। গত চার বছরে সিঙ্গাপুর,ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, চিন, কোরিয়া এবং কম্বোডিয়ায় এক চেটিয়া রাজত্ব করছে ‘জিলিঙ্গো’র। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়াতেও শুরু হয়েছে লেনদেন৷ 

অঙ্কিতি

কোনও সংস্থার ব্যবসা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার পেরোলেই তাকে ইউনিকর্ন তকমা দেওয়া হয়। অঙ্কিতির ফ্যাশন ই-কমার্স সংস্থা জিলিঙ্গো ইতিমধ্যেই সেই তকমা হাসিল করে নিয়েছে৷ কনিষ্ঠতম ভারতীয় মহিলা হিসাবে কোনও ইউনিকর্ন সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন অঙ্কিতি৷ 

২০১৯ সালে অঙ্কিতা এবং ধ্রুবের সংস্থার বাজারমূল্য পৌঁছে যায় ৯ হাজার ৮০০ কোটি। একসময় যে সেকোয়া সংস্থায় কাজ করতেন  অঙ্কিতি, তারাও জিলিঙ্গোয় ২২ কোটি ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগ রয়েছে সিঙ্গাপুরের তামসেক হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিটেডের। এদিকে, ব্যবসা যত ফুঁলে ফেঁপে উঠতে থাকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অশান্তিও তত বাড়তে থাকে৷ এই বিষয়েও অঙ্কিতি কোনও আইনি পদক্ষেপ নেবেন কিনা, তা নিয়েও জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছে৷ যদিও সংস্থার অডিট রিপোর্টে অনেক গড়মিল দেখা গিয়েছে৷ বিদেশি বিনিয়োগের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে৷