ক্যানিং: একদিকে চলছে অবিরাম বৃষ্টি৷ অন্যদিকে চলছে শিশুদের পালস পোলিও টিকা খাওয়ানোর কাজ৷ বেগুনি শাড়ি পরে দিদিরা হাঁক দিয়ে বেরাচ্ছেন৷ কই গো তোমাদের ছেলেপুলেদের নিয়ে এসো৷ কিন্তু ক্যানিং ১ নম্বর ব্লকের রবীন্দ্রনগরের ঘুটিয়ারি শরিফের খাল আর খালপাড়ের রাস্তা এখন মিলেমিশে একাকার৷ সেই জল ঠেঙিয়েই বাড়ি বাড়ি পোলিও খাওয়াচ্ছেন আশার দিদিরা৷ তবে এত কষ্টের পরেও তাঁদের পারিশ্রমিক শুনলে আতকে উঠতে হয়৷
আরও পড়ুন- টানা বৃষ্টিতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল পুরনো বাড়ি, আটকে একরত্তি
মঙ্গলবার ছিল রবিবার থেকে শুরু হওয়া পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচির তৃতীয় দিন৷ এর আগে সকলেই দেখেছে হাঁড়ির মধ্যে ভাসিয়ে শিশুকে পোলিও খাওয়ানোর দৃশ্য৷ মঙ্গলবার ধরা পড়ল আরও এক অবাক করা ছবি৷ কোমর সমান জল ডিঙিয়ে নাতিকে পোলিও খাওয়াতে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন মনরা মোল্লা৷ তাই তাঁকে থামিয়ে নিজেই জল ঠেলে এগিয়ে যান যান প্রৌঢ় আশা কর্মী মণিকা বিশ্বাস দাস৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও এক আশা দিদি লতা হালদার৷ জল বাড়ছে দেখে তিনি মাথায় তুলে নেন পোলিওর বাক্স৷ দিদিরা বাড়ির কাছে পৌঁছতে নাতিকে নিয়ে এসে পোলিও খাওয়ান মনরা মোল্লা৷ তিনি বলেন, ‘সাবধানে যেও দিদি৷ তোমরাই তো ভরসা৷’
দক্ষিণ ২৪ পরগণার অধিকাংশ জায়গাই জলের তলায় চলে গিয়েছে৷ এরই মধ্যে চলছে আশাকর্মী ও এএনএম (অক্সিলারি নার্স মিডওয়াইফ)-দের কাজ৷ এক স্বাস্থ্য কর্মী প্রশ্ন করেন, এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার পর আমাদের পারিশ্রমিক কত জানেন? উত্তরটাও অবশ্য তিনিই দিয়েছেন৷ ফাল্গুনি পাত্র মণ্ডল নামে ওই আশা কর্মী জানান, ৭৫টা বাড়ি ঘুরলে মিলবে ৭৫ টাকা৷ তবে সেই টাকা পাওয়া যাবে দুই মাস পরে৷ এত পরিশ্রম করার পর যে টাকা মেলে, তাতে তাঁরা নিজেদের বঞ্চিত বলেই মনে করেন৷ তাঁদের গলায় ঝরে পড়ল এক রাশ আক্ষেপ৷