কোমর সমান জল ঠেলেও পোলিও খাওয়াতে ছুটছেন আশা’র দিদিরা, ৭৫টি বাড়ি গেলে মিলবে ৭৫ টাকা!

কোমর সমান জল ঠেলেও পোলিও খাওয়াতে ছুটছেন আশা’র দিদিরা, ৭৫টি বাড়ি গেলে মিলবে ৭৫ টাকা!

 

ক্যানিং: একদিকে চলছে অবিরাম বৃষ্টি৷ অন্যদিকে চলছে শিশুদের পালস পোলিও টিকা খাওয়ানোর কাজ৷ বেগুনি শাড়ি পরে দিদিরা হাঁক দিয়ে বেরাচ্ছেন৷ কই গো তোমাদের ছেলেপুলেদের নিয়ে এসো৷ কিন্তু ক্যানিং ১ নম্বর ব্লকের রবীন্দ্রনগরের ঘুটিয়ারি শরিফের খাল আর খালপাড়ের রাস্তা এখন মিলেমিশে একাকার৷ সেই জল ঠেঙিয়েই বাড়ি বাড়ি পোলিও খাওয়াচ্ছেন আশার দিদিরা৷ তবে এত কষ্টের পরেও তাঁদের পারিশ্রমিক শুনলে আতকে উঠতে হয়৷ 

আরও পড়ুন- টানা বৃষ্টিতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল পুরনো বাড়ি, আটকে একরত্তি

মঙ্গলবার ছিল রবিবার থেকে শুরু হওয়া পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচির তৃতীয় দিন৷ এর আগে সকলেই দেখেছে হাঁড়ির মধ্যে ভাসিয়ে শিশুকে পোলিও খাওয়ানোর দৃশ্য৷ মঙ্গলবার ধরা পড়ল আরও এক অবাক করা ছবি৷ কোমর সমান জল ডিঙিয়ে নাতিকে পোলিও খাওয়াতে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন মনরা মোল্লা৷ তাই তাঁকে থামিয়ে নিজেই জল ঠেলে এগিয়ে যান যান প্রৌঢ় আশা কর্মী   মণিকা বিশ্বাস দাস৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও এক আশা দিদি লতা হালদার৷ জল বাড়ছে দেখে তিনি মাথায় তুলে নেন পোলিওর বাক্স৷ দিদিরা বাড়ির কাছে পৌঁছতে নাতিকে নিয়ে এসে পোলিও খাওয়ান মনরা মোল্লা৷ তিনি বলেন, ‘সাবধানে যেও দিদি৷ তোমরাই তো ভরসা৷’   

দক্ষিণ ২৪ পরগণার অধিকাংশ জায়গাই জলের তলায় চলে গিয়েছে৷ এরই মধ্যে চলছে আশাকর্মী ও এএনএম (অক্সিলারি নার্স মিডওয়াইফ)-দের কাজ৷ এক স্বাস্থ্য কর্মী প্রশ্ন করেন, এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার পর আমাদের পারিশ্রমিক কত জানেন?  উত্তরটাও অবশ্য তিনিই দিয়েছেন৷ ফাল্গুনি পাত্র মণ্ডল নামে ওই আশা কর্মী জানান, ৭৫টা বাড়ি ঘুরলে মিলবে ৭৫ টাকা৷ তবে সেই টাকা পাওয়া যাবে দুই মাস পরে৷ এত পরিশ্রম করার পর যে টাকা মেলে, তাতে তাঁরা নিজেদের বঞ্চিত বলেই মনে করেন৷ তাঁদের গলায় ঝরে পড়ল এক রাশ আক্ষেপ৷ 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *