কলকাতা: টেট আন্দোলনের জোয়ারে ভাসছে গোটা রাজ্য৷ ২০১৪ টেট উত্তীর্ণদের আমরন অনশন, বিক্ষোভ, তাঁদের উপর পুলিশি অ্যাকশন, টেট আন্দোলনে রাজনীতির ছোঁয়া, সব মিলিয়ে যখন অশান্ত পরিস্থিতি, তখন ১১ হাজার ৭৬৫ শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে অনলাইনে আবেদন জানানোর প্রক্রিয়া৷ বলা হয়েছে, ২০১৪ বা ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা সকলেই এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন৷ এদিকে, ২০১৪ এবং ১৭-র টেট পাশ আন্দোলনকারীদের দাবিগুলি এখনও অমীমাংসিত৷ এই অবস্থায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সরকারের পক্ষে বুমেরাং হবে না তো?
আরও পড়ুন- করুণাময়ীকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার বিদ্বজ্জনেরা, টেট ইস্যুতে পথে নাগরিক সমাজ
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল বলেছিলেন, ‘২০১৪ বা ২০১৭ টেট উত্তীর্ণদের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সবাই আমাদের চোখ সমান৷’ সেই সঙ্গে তিনি এও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, ‘কোনও নির্দিষ্ট বছরের টেট উত্তীর্ণদেরই বাড়তি নম্বর দেওয়া হবে না।’ এর আগেও এক সাংবাদিক বৈঠকে পর্ষদ সভাপতি বলেছিলেন, ‘ইন্টারভিউ ছাড়া কাউকেই চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আবেদন করতে হবে। সব দিক বিবেচনা করে প্রার্থীকে ইন্টারভিউ-এর জন্য ডাকা হবে।’ এদিকে ২০১৪ সালের চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, তাঁরা দু’বার ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন৷ তাই আর নতুন করে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না৷ তাঁদের সরাসরি চাকরি দিতে হবে। কার্যত তাঁদের সেই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছেন পর্ষদ সভাপতি৷ কিন্তু, টেট অন্দোলন প্রসঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য কী ছিল?
পর্ষদ অফিসের সামনে যখন ২০১৪-র টেট উত্তীর্ণরা চাকরিপ্রার্থীরা আমরন অনশনে বসেছেন, তখন উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী৷ কলকাতা ফেরার পথে তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আন্দোলনকারীদের ভালবাসি। যাঁরা ন্যায্য আন্দোলন করেন। কোর্টে কেস চলছে। কোর্টের অর্ডারটাও আমরা মানছি, সম্মান দিচ্ছি। আমি তো চাই কারও চাকরি যেন না যায়। আমি তো চাই সকলের চাকরি থাকুক।’ এও বলেন, এর পর যা বলার তা বলবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷
এর পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিক বৈঠকে এসে স্বাগত জানালেন পর্ষদের উদ্যোগকেই৷ তিনি বলেন,‘‘ রাজ্য সরকার নিয়োগ চায়। কিন্তু, একদল সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপর ভারসা রাখছি।’’ সেই সঙ্গে এই আন্দোলনের পিছনে বিরোধীদের মদত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন৷
এদিকে, আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বলেছিলেন ২০১৪ সালের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমস্ত টেট উত্তীর্ণদের চাকরি দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে সাড়ে ১৬ হাজার এবং পরের ধাপে সাড়ে ৩ হাজার নিয়োগ করা হবে। কিন্তু আরটিআই (তথ্যের অধিকার আইন) করে জানা যায়, ষোল হাজার প্রার্থী নিয়োগ করা হয়নি৷ পর্ষদ সভাপতি যদি আমাদের দাবি অন্যায্য বলে থাকেন, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই তো ন্যায্য নয়।
অন্য দিকে আন্দোলন চালাচ্ছেন ২০১৭-র টেট উত্তীর্ণরাও৷ তাঁদের কথায়, আমরা ২০১৭ সালের টেট প্রার্থী হলেও আমাদের পরীক্ষা হয় চার বছর পর। এনসিডি-র গাইডলাইন মেনে পরীক্ষা দিয়েছি। অর্থাৎ টেট পরীক্ষার আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে তবে পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষার ফল প্রকাশের দেখা গেল ৯,৮৯জন পাশ করেছে। কিন্তু চাকরি হয়নি।
করুণাময়ীতে ৫০০ মিটারের ব্যবধানে আন্দোলনে বসেছিলেন ২০১৪ এবং ২০১৭-র টেট উত্তীর্ণরা৷ তাঁদের দাবি, আর পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ নয়। সরাসরি চাকরি। এরই মাঝে আদালতের নির্দেশে রাতের অন্ধকারে আন্দোলনকারীদের তুলে দেয় পুলিশ৷ আর এই ইস্যুকে অস্ত্র করেই আন্দোলনে নেমে পড়েছে বিরোধীরা৷ কারণ, বছর ঘুরতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। এই পরিস্থিতিতে এমন সুবর্ণ সুযোগে হাতছাড়া করতে নারাজ রাজনীতির কারবারীরা৷ এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলকে বাড়তি সুবিধা দেবে, নাকি বুমেরাং হয়ে আঘাত হানবে, সেটাই বড় প্রশ্ন৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>