কলকাতা: বদলির প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পাঁচ শিক্ষিকা৷ এই ঘটনায় তোলপাড় বাংলা৷ এই পাঁচ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে পুলিশ৷ কেন এই চরম পদক্ষেপ? উছেঠে একাধিক প্রশ্ন৷ এরই মাঝে আন্দোলনরত শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷ তাঁদের ‘বিজেপি ক্যাডার’ বলে কটাক্ষ করলেন তিনি৷
আরও পড়ুন- সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর, মহার্ঘ ভাতার পর এবার বাড়ছে বেতন
এদিন দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে ব্রাত্য লেখেন, বাম আমলে পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন বিভাগের অধীনে SSK এবং MSK-র সহায়ক-সহায়িকা, সম্প্রসারক-সম্প্রসারিকারা নামমাত্র সাম্মানিক-এর বিনিময়ে কাজ করতেন। কাজের নিশ্চয়তা, আর্থিক নিরাপত্তা এবং অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা বলে কিছুই ছিল না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে তাঁদের বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের অধীনে নিয়ে এসেছে৷ সহায়ক-সহায়িকাদের সাম্মানিক বাড়িয়ে মাসিক ১০ হাজার ৩৪০ টাকা এবং সম্প্রসারক-সম্প্রসারিকাদের সাম্মানিক বাড়িয়ে ১৩ হাজার ৩৯০ টাকা করা হয়েছে৷ এছাড়াও বছরে ৩ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সকলকে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা হয়েছে৷ ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার সময় এককালীন ৩ লক্ষ টাকা অবসর ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এছাড়াও নানা ছুটিছাটার ব্যবস্থার রয়েছে৷ শিক্ষা মন্ত্রীর কথায়, এর পরেও যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা শিক্ষক-শিক্ষিকা নন, বিজেপি ক্যাডার৷
এদিকে, পুলিশও ওই ৫ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৩ ধারায় কর্তৃব্যরত সরকারি কর্মীর কাজে বাধার পাশাপাশি ১৮৮, ১৪৪, ৩০৯ (আত্মহত্যার চেষ্টা), ৩৩২ –এর মতো একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে৷ অন্যদিকে জানা গিয়েছে, এই পাঁচ শিক্ষিকার শরীরে ৪০-৫০ মিলিগ্রাম কীটনাশক মিলেছে৷ এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ২ জন৷ অন্যদিকে এনআরএস-এর ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ১ শিক্ষিকা৷ তাঁদের শ্বাসকষ্ট দেখা গিয়েছে৷ প্রভাব পড়েছে যকৃৎ-এ৷ বাকি দুই শিক্ষিকার অবস্থা স্থিতিশীল৷ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই পাঁচ শিক্ষিকা হামলা নামে একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক বিষ খেয়েছিলেন৷ যার প্রভাব মারাত্মক৷
আরও পড়ুন- ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে রেলে চাকরির সুযোগ
এর আগে বেতন বৃদ্ধির দাবিতেই বিকাশভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যরা। ‘সন্ধান চাই, সন্ধান চাই। নিখোঁজ বাংলার শিক্ষামন্ত্রীর, সন্ধান চাই’- রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ‘নিখোঁজ’ পোস্টার দিয়ে প্রতিবাদ দেখান তাঁরা৷
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে৷ শিক্ষিকারা যদি বিজেপির ক্যাডার হয়ে থাকেন, তাহলে কি তাঁদের আন্দোলন করার অধিকার নেই? আর আন্দোলন করলেই কি কয়েকশো কিলোমিটার দূরে বদলি করা হবে? আরও একটি প্রশ্ন উঠছে, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষিকাদের বদলি হয় কী ভাবে? তবে কি বিজেপি করার আপরাধেই এই শান্তি দেওয়া হয়েছে তাঁদের?