কলকাতা: কৃষক ইস্যু থেকে বেকারত্ব, একাধিক বিষয়ে সুর চড়াল বাম-কংগ্রেস শিবির৷ রাজ্যে কৃষক স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে শাসক দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে প্রতারণার অভিযোগে তুলোধোনা করলেন রাজ্য সরকারকে৷ আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের দাবি তুলল তারা৷
আরও পড়ুন- সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিক সরকার, আস্থা ভোটের দাবি বাম-কংগ্রেস জোটের
এদিন সুজন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের রাজ্যে কৃষকরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি থেকে বঞ্চিত৷ দেশে ধানের এমএসপি ১,৮৬৮ টাকা, কেরলে ২৮০০ টাকা৷ কিন্তু এর ধারে কাছে নেই বাংলা৷ এ রাজ্যে এগারোশ-বারোশ টাকায় ধান কেনা হচ্ছে৷ তাঁদের দাবি, বিধানসভার অধিবেশন ডেকে এমএসপি নির্ধারণ কার হোক৷ এমএসপি’র কম দামে ধান কেনা হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ৷
সুজনবাবু আরও বলেন, ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার যে বিল পাশ করিয়েছিল তা দিল্লির আইনের সমতুল্য৷ ২০১৭ সালে ইলেকট্রনিক থ্রেডিংয়ের যে বিল পাশ করানো হয়েছে সেটাও কেন্দ্রের কৃষি আইনের সমান৷ বিরোধীদের দাবি অগ্রাহ্য করে রাজ্য সরকার জোড় করে যে কৃষক বিরোধী অবস্থান নিয়েছে, সে জন্যই কি তারা সামনে আসতে ভয় পাচ্ছে? প্রশ্ন তোলেন তিনি৷
মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগেও এদিন সুর চড়ান সুজন চক্রবর্তী৷ তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু এর প্রভিশন কোথায়? ২০২০-২০২১ সালের বাজেটের মেয়াদ আগামী বছর মার্চ মাসে শেষ হয়ে যাবে৷ ২০২১ সালে যে বাজেট হবে তা অন্তর্বর্তী বাজেট, পূর্ণাঙ্গ বাজেট নয়৷ বাজেটে প্রভিশন ছাড়া কী ভাবে স্বাস্থ্যসাথী ঘোষণা করা হল? এই ঘোষণা করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলেই আক্রমণ শানান তিনি৷
তাঁর কথায়, পুরসভা, পঞ্চায়েতকে অকেজো করে সরকারের পয়সা ধ্বংস করে দুয়ারে সরকার করা হচ্ছে৷ স্বাস্থ্যসাথী সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কথা ডেসিম্বরের শেষে মনে পড়েছে৷ হাতে মাত্র দু’ মাস সময়৷ কারণ মার্চ মাসেই নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে৷ এপ্রিল বা মে মাসে ভোট৷ কোনও কাজ করার যখন সুযোগ নেই, তখন কাজ করার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অথচ এই কাজগুলি করার জন্য কোনও প্রভিশন রাখেননি৷ প্রভিশন রাখতে গেলে স্পেশাল সেসনে বিশেষ অ্যাজেন্ডা দিয়ে বিধানসভায় আলোচনা করতে হয়৷
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর আদিবাসী গ্রামে ‘উন্নয়ন’ খোঁজে প্রশাসন! এতদিন কি ‘শীতঘুমে’?
তিনি বলেন, শুধু মুখ্যমন্ত্রী আর রাজ্যপালের বিবাদ চলছে৷ তাঁদের সাধারণ মানুষের কী? খাদ্য, মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান-এর উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আনা হচ্ছে৷ সরকারের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থাকলে সরকার বিধানসভা অধিবেশন ডাকুক৷ সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন , বিধানসভা কেন এড়িয়ে যাচ্ছে সরকার? তবে কি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বলে ভয় পাচ্ছে? একথা শাসকদলের বিধায়কদের মধ্যে থেকেই উঠে আসছে৷ তাঁরাও চাইছেন বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হোক৷ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি আটকে রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী কি শঙ্কায় আছেন? সংখ্যা গরিষ্ঠতা যদি নাই থাকে তাহলে তিনি কেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবি করে প্রতারণা করছেন?’’ সুজনবাবু আরও বলেন, ‘‘ চাকরি, নিয়োগ, দুয়ারে সরকার বা পাড়ায় পাড়ায় সমাধানের নামে যে প্রতারণা চলছে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার তার অবস্থান না জানালে নবান্নে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না৷’’