কলকাতা: সুদূর পঞ্জাব থেকে নিউটাউনের আবাসনে এসে গা ঢাকা দিয়েছিল জয়পাল সিং ভুল্লার ও তার সঙ্গী যশপ্রীত সিং ওরফে জসসি৷ বুধবার দুপুরে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে খতম হয় এই দুই গ্যাংস্টার৷ খুন, ডাকাতি, মাদক পাচার তো বটেই, পাকিস্তান থেকে হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে৷ লুধিয়ানার জাগরাঁও জেলার দুই এএসআই খুনে অভিযুক্ত জয়পাল৷ দীর্ঘদিন ধরেই তার খোঁজ চালাচ্ছিল পুলিশ৷ জয়পালের মৃত্যুর সঙ্গে পঞ্জাবে অপরাধ দুনিয়ার একটি অধ্যায় শেষ হল৷
আরও পড়ুন- BJP-তে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছেন শুভেন্দু, নেতাদের তুষ্ট করতে দিল্লি ছুটছেন, কটাক্ষ ফিরহাদের
কুখ্যাত অপরাধী জয়পাল সিং ভুল্লার ছিল পঞ্জাবের ফিরোজপুরের বাসিন্দা৷ ফাজিলকার অপর এক কুখ্যাত গ্যাস্টার জসবিন্দর সিং রকিকে গুলি করে হত্যা করার পরেই উঠে আসে জয়পাল সিং ভুল্লারের নাম৷ এই হত্যাকাণ্ডের আগে পর্যন্ত ফিরোজপুর শিল্পক্ষেত্রে একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসাবেই পরিচিত ছিল সে৷ রকিকে হত্যা করার পর ফেসবুক পোস্টে জয়পাল লিখেছিল, ‘আভি তো খেল শুরু হুয়া হ্যায়। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।’ এর পর সঙ্গীদের নিয়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ চার রাজ্যে একের পর খুন ও ডাকাতি করে গিয়েছে ভুল্লার৷ তার বিরুদ্ধে ৫০ টিরও বেশি মামলা রয়েছে৷ এর পরেই জয়পালকে ত্যাগ করে তার পরিবার৷ জয়পাল ভুল্লারের কাহিনীর একটা উল্লেখ়োগ্য অধ্যায় হল তাঁর পিতৃপরিচয়৷ তার বাবা পঞ্জাব পুলিশের ইন্সপেক্টর৷ যদিও তিনি এখন অবসরপ্রাপ্ত৷
গোপন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ফিরোজপুর ক্যান্টের বাসিন্দা দীপু ধিংগ্রাকেও হত্যা করেছিলেন জয়পাল। জয়পালের বিরুদ্ধে ৫০-এরও বেশি ডাকাতি ও খুনের মামলা রয়েছে। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে তাকে খুঁজছিল। কিছুদিন আগে, লুধিয়ানার জাগরাঁওয়ে দুজন এএসআইকে হত্যার পর শুরু হয় জয়পালের খোঁজ পেতে আরও মরিয়া হয়ে ওঠে পুলিশ৷ ফিরোজপুর শিল্পাঞ্চলে জয়পালের বাড়ির উপর কড়া নজর ছিল পুলিশের৷ কিন্তু রকিকে হত্যার পরে জয়পাল আর বাড়িতে ফেরেনি৷ জয়পালের মাথার দাম ছিল ১০ লক্ষ টাকা৷ যশপ্রীতের মাথার দাম ছিল ৫ লক্ষ টাকা৷ কিন্তু গত ৪ বছর ধরে জয়পাল ও তার সঙ্গী যশপ্রীতের টিকিও খুঁজে পায়নি পুলিশ৷ অবশেষে তাদের খেলা শেষ হল নিউটাউনে৷
জয়পাল সিং ভুল্লার প্রথম জীবনে স্পোর্টসম্যান হিসাবেই পরিচিত ছিল৷ মুম্বইয়ের পুলিশ ইন্সপেক্টরের ছেলে দাউদ ইব্রাহিমের মতোই গ্যাস্টস্টার হয়ে ওঠে পঞ্জাবের পুলিশ ইন্সপেক্টরের ছেলে৷ এর পিছনে ছিল অর্থের লোভ৷ ফিরোজপুরের বস্তি টানকাওয়ালির বাসিন্দা চন্দু গ্যাংস্টার চন্দু গ্যাং নামে একটি দল তৈরি করে৷ ফিরোজপুরে সক্রিয় ছিল তার গ্যাং৷ এই গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় জয়পাল৷ সেখানে দেওদা নামে আরও একটি গ্যাং ছিল৷ দুই গোষ্ঠীর মধ্যেও খুনোখুনি হয়৷ ২০১৬ সালে রকিকে খুন করার পর চার রাজ্যে দাপিয়ে বেড়ায় জয়পাল৷ তার দলে ছিল ভাই অমৃতপাল, গগনদীপ, ভিকি গউন্ডার, প্রেমা লাহোরিয়া, বলজিন্দর সিং ওরফে বাব্বি, যশপ্রীত সিং ওরফে জসসি এবং দর্শন সিং৷ খুন-ডাকাতির পাশাপাশি ২০১৭ সালে চণ্ডিগড়ের কাছে বানুরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্যাশ ভ্যান থেকে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা লুঠ করে৷ এর পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ কিলো সোনা লুঠের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- ভালো আছে বুদ্ধদেব, হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে ফিরলেন বাড়ি
এদিকে দর্শন সিং ও বলজিন্দর সিংকে মধ্যপ্রদেশে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ পরে গ্রেফতার হয় লাকি৷ তাদের জেরা করে ও মোবাইলের সূত্র ধরে পুলিশ জানাতে পারে তারা ২০ মে’র মধ্যে ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত পার করেছে৷ এর পর গ্রেফতার হয় লুধিয়ানার কুখ্যাত অপরাধী ভরত কুমার৷ তার কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে সাপুরজি-পালনজি’র আবাসনে লুকিয়ে রয়েছে জয়পাল ও জসসি৷