ছিলেন শিক্ষিকা, আজ ফুটপাটই ঠিকানা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা ইরা বসুর

ছিলেন শিক্ষিকা, আজ ফুটপাটই ঠিকানা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা ইরা বসুর

 

কলকাতা:  পরনে নোংরা ধুলো বালি মাখা শত ছিন্ন নাইটি৷ মাথার চুল উস্কোখুস্কো৷ কাঁধে ঝুলি৷ ঠিকানা ডানলপের ফুটপাত৷ দু’বছর আগে সেখানেই নিজের ‘ঘর’ বানিয়েছিলেন তিনি৷ তবে কারও থেকে এক পয়সা সাহায্য নেননি৷ 

আরও পড়ুন- ‘নাক ঘষে ঘষে BJP-তে ফিরতে হবে’, দলত্যাগী তন্ময়কে তীব্র কটাক্ষ সৌমিত্রের

ঝুলি হাতে বৃদ্ধা কখনও চায়ের দোকান, কখনও আবার লস্যির দোকানের সামনে ঘুরে বাড়ান৷ কখনও আবার পয়সা দিয়ে কিনে খান এক ভাঁড় চা৷ আবার পছন্দের দোকানদারকে নিজের টাকায় বিরিয়ানিও কিনে খাওয়ান তিনি৷ এলাকায় তিনি পরিচিত ‘ভবঘুরো মাসিমা’ বলেই৷ কিন্তু তাঁর আসল পরিচয় শুনলে অনেকেই চমকে উঠবেন৷ তিনি খড়দহ প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের এক সময়ের জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা ইরা বসু৷ সম্পর্কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা৷  

তবে পুরনো দিনের কথা বলতে নারাজ ইরা দেবী৷ চালচুলো জীবনই এখন তাঁর সঙ্গী৷ কিন্তু কেন এমন হল একজন শিক্ষিকার জীবন? কেন ডানলপের এটিএম-এর কোনায় নিজেকে নিয়ে এলেন নিজেকে?  তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমার জীবন৷ আমার যা ইচ্ছা তাই করব৷’’ তবে খবরটা চাপা থাকানি৷ খবর পৌঁছয় খড়দহ পুরসভার কাছে৷ সেখান থেকে বরাহনগর থানায়৷ খবর পেয়ে সিপিএম নেতারাও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ তবে নিজের জীবন রহস্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না ইরা বসু৷ 

মানসিক ভারসাম্য হারালেও, ঝরঝরে বাংলা ও ইংরেজি শুনলেই ফুটে ওঠে ভিতরের শিক্ষা৷ কেউ খোঁজ রাখেনি ভবঘুরে মাসিমার ভিতরে লুকিয়ে থাকা ইরাদেবীর৷ তবে তাঁর কাছে খোঁজ রয়েছে জগৎ সংসারের৷ খোঁজ রাখেন বোন-ভগ্নিপতিরও৷ বুদ্ধদেববাবুর শ্যালিকা হওয়া সত্ত্বেও কেন এমন দূরবস্থা তাঁর? এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘মানুষটা অসুস্থ। মীরাও অসুস্থ। ওঁদের তো করোনা হয়েছিল। কেন আবার ওঁদের নিয়ে টানাটানি করছেন?’’    

এক সময় সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন৷ তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আত্মীয়তা নিয়ে কখনই বরাই করেননি৷ সহকর্মীরা প্রশ্ন করলে বরং হেসে এড়িয়ে গিয়েছেন৷ তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আত্মীয়তা নিয়ে গর্ব করতেন৷ স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণকলি চন্দ্র বলেন, ‘ ছাত্রীদের মুখেই শুনেছি উনি ডানলপ মোড়ে রাস্তায় ভবঘুরের মতো দিন কাটাচ্ছেন। আমরা তাঁর সেই ছবিও দেখেছি।’ ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে অবসর নেন ইরাদেবী৷ স্কুলে পড়ানোর সময় খড়দহেই থাকতেন৷ পরে তাঁকে দেখা যা শিয়ালদহ স্টেশনে৷ আর এখন ডানলপের রাস্তায়৷ তবে এখনও প্রতিদিন নিয়ম করে ইংরেজি বাংলা ও কাগজ পড়েন৷

জানা গিয়েছে প্রতিদিন দু’বেলা দোকান থেকে চা কিনে খান তিনি৷ একটি হোটেলে রাখা থাকে তাঁর খাবার৷ সেটিও টাকা দিয়েই নিয়ে যান৷ কিন্তু টাকা পান কোথা থেকে? রেগে জবাব দিয়েছিলেন, ‘ব্যাঙ্কে আছে৷ প্রয়োজন হলে তুলি৷ ’করোনা নিয়েও সতর্ক ইরা দেবী৷ কথা বলেন ৬ ফুট দূর থেকে৷ তবে বুদ্ধদেববাবু ও মীরাদেবীর কথা উঠতেই অসন্তুষ্ট৷ বলেন, ‘ওঁরা আমার কেউ হয় না৷’

আরও পড়ুন- কর্মীদের গায়ে হাতে দিলে বুকে পা তুলে দেব: দিলীপ

প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, বুদ্ধদেববাবুর সভায় তাঁকে বেশ কয়েক বার দেখেছি৷ এর আগেও উনি নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন৷ সেই সময় উদ্ধার করে এনেছিলাম৷ ফের হারিয়ে যান৷ এ বিষয়ে মীরাদেবীর বক্তব্য, ‘কে কী দাবি করছেন, তাতে কিছু এসে যায় না৷’ গতকাল বিকেলে অবশ্য পুলিশ ইরাদেবীকে নিয়ে যায় লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালে৷ 
 

 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 1 =