কলকাতা: বঙ্গ সফরে এসে বাংলার অবনতির পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ এদিন তাঁকে ভুল প্রমাণিত করে পাল্টা তথ্য তুলে ধরলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়৷
আরও পড়ুন- এবার রাজীবের কেন্দ্রে পড়ল ‘বহিরাগত’ পোস্টার, চাঞ্চল্য রাজ্য রাজনীতিতে
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সৌগতবাবু বলেন, বিজেপি’র বক্তব্য, স্বাধীনতার পর ভারতে বাংলার জিডিপি এক তৃতীয়াংশ ছিল৷ কিন্তু গত দশ বছরে বাংলার জিডিপি ৫৩ শতাংশ বেড়েছে৷ এছাড়াও দাবি করা হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে শিল্প উৎপাদনে ৩০ শতাংশ থেকে কমে ৩.৫ শতাংশ হয়েছে৷ বাস্তবটা সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ গত দশ বছরে শিল্প খাতে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে৷ শিল্প বৃদ্ধিতে বাংলা পঞ্চম স্থানে৷ মাথা পিছু আয় নিয়েও ভুল তথ্য দিয়েছেন অমিত শাহ৷
ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাংলার অবনতির কথা বলা হচ্ছে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকারি সংস্থা বেঙ্গল কেমিক্যালকেই বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র৷ অমিত শাহের কথায়, বাংলায় পাট শিল্পের অবস্থাও খারাপ৷ কিন্তু রাজ্যে অধিকাংশ মিলই খোলা রয়েছে বলে দাবি করেছেন সৌগতবাবু৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার চাল রাখার জন্য ৭ কোটি পাটের ব্যাগ কেনার বরাত দিয়েছে৷
শিল্প বৃদ্ধিতে বাংলা ২০ তম স্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন অমিত শাহ৷ কিন্তু ২০১৯-২০ তে শিল্প বৃদ্ধির হার ভারতের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি বাংলায় হয়েছে বলে জানান সৌগতবাবু৷ পরিষেবা ক্ষেত্রেও ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ৷ তিনি বলেন, অমিত শাহ বাংলার রাস্তা ও বিদ্যুৎ পরিষেবা খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন৷ আসল পরিসংখ্যান হল-রাজ্যে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১১ থেকে এখনও পর্যন্ত ৯০ লক্ষ পরিবারের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷ এক দশকে ১ লক্ষ ১৮ হাজার কিলোমিটার নতুন গ্রামীণ রাস্তা তৈরি হয়েছে৷
আরও পড়ুন- ধ্বংস হচ্ছে গড়ের মাঠের সবুজ, নোংরা দেখে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হাইকোর্টের
বাংলায় বিদেশি বিনিয়োগ FDI ১ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে৷ কিন্তু ২০১৬-১৮ সালের মধ্যে FDI ২৪ শতাংশ বেড়েছে৷ ২০১০ থেকে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ৩ গুণ বেড়েছে৷ হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাংলা সর্বোচ্চ৷ নার্সের সংখ্যা ৫১ শতাংশ বেড়েছে৷ বেড়েছে চিকিৎসকের সংখ্যা৷ তিনি আরও জানান, ২০১০-এর পর রাজ্যে ৩০টি নতুন বিশ্ববিদ্যায়ল হয়েছে৷ ৫০টি নতুন কলেজ হয়েছে৷ ১০০ শতাংশ স্কুলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷ অন্যদিকে বাংলায় একর প্রতি বার্ষিক ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয় বাংলায়৷ শস্যবিমার সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামটাই দেয় রাজ্য সরকার৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সেখানে প্রিমিয়ামের একটা নির্দিষ্ট অংশ দেওয়া হয়৷
আরও পড়ুন- ‘বিশ্বভারতীর ভিতরে ঢুকে পতাকা লাগিয়ে দেব’, শাহের সফরে হুঙ্কার অনুব্রতর
প্রতি ব্যক্তি পিছু ৫ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্য বিমা পান বলে দাবি করা হয়েছে৷ আয়ুষ্মান প্রকল্প চালু হওয়ার ২ বছর আগে বাংলায় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হয়েছিল৷ ১.৪ কোটি পরিবার বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পায়৷ বাংলা অপরাধমূলক কাজকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অমিত শাহ৷ ২০১৪ থেকে ১৯ এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েছে ৫৬ শতাংশ৷ কিন্তু বাংলায় ২১ শতাংশ কমেছে৷
তাঁর পাল্টা অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে একটা মিথ্যে প্রচার করার চেষ্টা চলছে৷ সর্বোতভাবে এর বিরোধিতা করে মানুষের কাছে সত্য তথ্য পৌঁছে দিতে চাই৷