কলকাতা: রূপকথার গল্পের আড়ালে বয়ে চলা এক চোরা স্রোত৷ যে গভীর স্রোতে মিলিয়ে গেল রসিকা আগরওলায় জৈনের মতো একটি তাজা প্রাণ৷ শিল্পপতি পরিবারের রাজকন্যার জীবনে ঘটল এক করুণ পরিণতি৷ যাঁর মৃত্যুর পরতে পরতে রহস্যের জাল৷
আরও পড়ুন- তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় বড় চমক! বাদের খাতায় বহু হেভিওয়েট, নতুনদের গুরুত্ব!
তিনি ভালো নেই৷ সে কথা তাঁর পরিবার জানত৷ জানত তাঁর স্বামীর অত্যাচারের কথা৷ এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন রসিকার বাবা মহেন্দ্র কুমার জৈন৷ তিনি বলেন, গত অগাস্ট মাসে কুশল রসিকাকে বাজে ভাবে মেরেছিল যে ওঁর চোখে আঘাত লাগে৷ পরে কুশলের পরিবারই চিকিৎসা করায়৷ গত ১২ ফেব্রুয়ারি রসিকার বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি৷ সেই সময় জয়পুর থেকে ফিরেছিলেন কুশল-রসিকা৷ ১৩ ফেব্রুয়ারি তুতো ভাই-বোনদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতেও গিয়েছিলেন তিনি৷ ১৪ ফেব্রুয়ারি কুশলের সঙ্গে ফের অশান্তি হয় রসিকার৷ সে কথা তাঁদের জানানো হয়েছিল৷ ১৫ তারিখও দু’জনের মধ্যে ঝগড়া অশান্তি হয়৷ কিন্ত সেদিনের কথা সম্পূর্ণ জানেন না মহেন্দ্রবাবু৷ তিনি জানান, ১৬ তারিখ সকালে আমাকে জানানো হয় রসিকা ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে৷ তাঁকে উডল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেখানে গিয়ে দেখি রসিকা এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে যন্ত্রণায় চিৎকার করছে৷ রাত সাড়ে নটা নাগাদ রসিকাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা৷
মহেন্দ্রবাবু বলেন, এরই মধ্যে ২টো বেজে ৩ মিনিটে আমি মেয়ের একটা মেসেজ পাই৷ ও লিখেছিল, ‘‘বাবা আমি আর এই পরিবারে থাকতে পারব না৷ এর চেয়ে আমার চলে যাওয়া ভালো৷ আমি যাচ্ছি৷’’ তিনি জানান, হাসপাতালে পৌঁছনোর পর তিনি এই মেসেজ দেখেন৷ যে মোবাইল থেকে এই মেসেজ করা হয়েছিল নীলমজির (রসিকার শাশুড়ি) কাছ থেকে ওই মোবাইলটি চেয়েছিলাম৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই মোবাইল পাওয়া যায়নি৷ পুলিশও খোঁজ পায়নি৷ ওই মোবাইল ওঁদের কাছেই আছে বলেই দাবি তাঁর৷ তিনি বলেন, ওই মোবাইল হাতে এলেই সব রহস্য ফাঁস হবে৷ বোঝা যাবে শেষ মুহূর্তে রসিকা কাকে কাকে মেসেজ করেছিল৷ ওই মোবাইলে কোনও নোট রেখে গিয়েছে কিনা৷
১৭ ফেব্রুয়ারি কুশল ও তাঁর বাবা-মা নরেশ ও নীলম আগরওয়ালের বিরুদ্ধে আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মহেন্দ্র কুমার জৈন৷ গোয়েন্দা বিভাগ গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে৷ মহেন্দ্রবাবু বলেন, নরেশ আগরওয়াল এবং কুশল আগরওয়ালের জন্যই আমাদের মেয়েকে হারাতে হয়েছে৷
বিয়ের পর থেকেই রসিকার উপর অত্যাচার হয়েছে৷ বারবার টাকা-পয়সা চাওয়া হয়েছে৷ রসিক জৈনের মা সঙ্গীতা জৈন বলেন, স্কুল-কলেজে টপার ছিল রসিকা৷ সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করেছিল৷ ২০১৯ সালে কুশল আগরওয়ালের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিই৷ আমাদের বলা হয়েছিল অনেক বড় ব্যবসা রয়েছে কুশলের৷ অযোধ্যায় রিসর্ট রয়েছে৷ সে কারণেই বিয়ে দিয়েছিলাম৷ ভেবেছিলাম মেয়ে ভালো ছিল৷ রোকা থেকে বিয়ে পর্যন্ত ওঁদের সমস্ত দাবি আমরা পূরণ করেছিলাম৷ বিয়ের পরেও যাবতীয় দাবি সাধ্যের বাইরে গিয়েই আমরা পূরণ করেছি৷ কিন্তু রসিকা সুখে ছিল না৷ অত্যাচার বাড়ছিল৷
তাঁর অভিযোগ, শুধু কুশলই নয়, নরেশজি ও নীলমজিও অত্যাচার চালাত৷ কুশলের অপরাধের কথা বললেও রসিকার কথায় আমল দেওয়া হয়নি৷ উল্টে অত্যাচার করা হয়েছে৷ বলত, তোমার বাড়ি থেকে কিছুই পাঠায় না৷ আমরা বলেছিলাম, রসিকা বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছে, ওকে অফিসে যেতে দিন৷ প্রতিশ্রুতি দিলেও রসিকাকে এক বছর ঘরেই বসিয়ে রাখা হয়৷ সমাজের কথা ভেবে আমরা কিছু করতে পারিনি৷ এত মেধাবী বাচ্চা আমি কোনও দিনও দেখিনি৷ আমার মেয়েকেই এখন পাগল বলছে৷ মৃত্যুর দু’দিন আগেও মারধর করা হয়েছিল৷ তাঁর দাবি, ‘‘আমার মেয়ে যেন সুবিচার পায়৷’’
আরও পড়ুন- হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামে কি সম্মুখ সমরে মমতা-শুভেন্দু?
রসিকা জানুয়ারিতে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিল৷ ওঁর শ্বশুরমশাই এসে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল৷ রসিকার ভাই বলেন, কুশল দিদিকে কোনও টাকা পয়সা দিত না৷ আমাকে বলত টাকা পাঠাতে৷ দিদি একেবারেই নেশা করা পছন্দ করত না৷ ও ওখানে থাকতে পারছিল না৷