তমলুক: তিনি ছিলেন গরিব মানুষের ভগবান৷ তাঁর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন হাজার হাজার মানুষ৷ দুরারোগ্য ব্যধি থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিল বহু রোগী৷ কিন্তু, বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসাবে নিতেন মাত্র ১ টাকা৷ চলে গেলেন সেই মানবদরদী চিকিৎসক, ‘গরিবের ভগবান’৷ চিকিৎসক তুষার রায়ের প্রয়াণে শোকের ছায়া তমলুক শহর জুড়ে। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অগণিত শুভানুধ্যায়ী।
আরও পড়ুন- ডুয়েট গেয়ে মঞ্চ মাতালেন কুণাল-সায়নী! প্রিয় নেতা-নেত্রীর গানে উচ্ছ্বসিত হাজার হাজার দর্শক
বছর দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন তুষারবাবুর স্ত্রী৷ একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার নিয়ে থাকেন মুম্বইয়ে। তিনি মুম্বইয়ে ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী৷ তবে শিকড়ের টান এড়াতে পারেননি তুষারবাবু৷ মানুষের ভালোবাসার টানে থেকে যান তমলুকেই৷ অবসর জীবনে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেই দিন কাটত তাঁর৷ সেই সঙ্গে করতেন সমাজসেবার কাজ৷ মঙ্গলবার দুপুর থেকেই অসুস্থ বোধ করছিলেন। নিজের সমস্যা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি৷ তৎক্ষণাৎ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও শুরু করেন। তাতে কিছুটা সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু বুধবার সকালে ফের শরীর খারাপ হতে থাকে তাঁর৷ দেরী না করে নিয়ে যাওয়া হয় তমলুকের একটি নার্সিংহোমে৷ সেখানে ভর্তি করার পর প্রায় দু’ ঘণ্টা চিকিৎসা চলে তাঁর। আর সময় দেননি তিনি৷ বেলা ১২টা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তমলুকের ১ টাকার ডাক্তার। মৃত্যকালে বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ‘ভগবান’-কে হারিয়ে চোখে জল তমলুকবাসীর৷
চিকিৎসার পাশাপাশি তমলুক শহরে ‘বিদ্যাসাগর কৃষ্টি সম্মেলনী’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনা পয়সা কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতেন তিনি। আশির দশক থেকে তমলুক শহরের নবম দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ফ্রি কোচিং দেওয়া শুরু করেন। মানবদরবী অধ্যাপক তুষার গিরি এবং সমাজসেবী মানব বেরা তাঁকে কোচিং সেন্টার পরিচালনার কাজে সাহায্য করেন৷
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগে ১ টাকায় চিকিৎসা করলেও ওষুধের দাম বাড়ায় ফি বাবদ সামান্য টাকা বাড়িয়েছিলেন তুষারবাবু৷ ওই টাকায় ওষুধ কেনা ছাড়াও শ্যামল বক্সি নামে এক কর্মচারীর বেতন মেটাতেন। তাঁর মৃত্যুতে শহরজুড়ে শোকের ছায়া।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>