বহরমপুর: ভর সন্ধ্যায় ভিড়ের মধ্যে ঠাণ্ডা মাথায় প্রেমিকাকে কুপিয়ে খুন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে সুশান্ত চৌধুরী৷ কিন্তু, ধরা পরার পর থেকেই সে অস্থির৷ রাতভর দু’চোখের পাতা এক করেনি৷ বহরমপুর সদর থানার লকআপের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পায়চারি করে কাটিয়েছে সুশান্ত৷ সোমবার রাতে ধরা পরার পর বেপোয়ারে মনোভাব দেখা গিয়েছিল সুশান্তের মধ্যে৷ তার প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘ও কি বেঁচে রয়েছে?’’ এর পর ধীরে ধীরে সুশান্তের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়৷ এমনটাই পুলিশ সূত্রের খবর। আপাতত সদর থানার ফাঁকা মহিলা লক আপে রাখা হয়েছে ‘খুনি’ প্রেমিককে।
আরও পড়ুন- মগরাহাটে ফের শুটআউট, নিহত ব্যবসায়ী
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে তাকে রুটি তরকারি খেতে দেওয়া হয়েছিল৷ সে খাবার মুখে তোলেনি সুশান্ত৷ অনীহার সঙ্গে কোনও মতে চা খেয়েছে৷ যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে না খেলেও পরে খাবার খেয়েছে সে। বুধবার দুপুরে গারদের দরজায় পা তুলে খানিক বিশ্রাম নেওয়ার পর মেঝেতে হাতের উপর মাথা রেখেই কিছু ক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়৷
তবে গত দু’দিনে পরিবারের কোনও সদস্য বা পরিচিত, কেউই তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। তবে সুশান্ত যে লকআপে রয়েছে, তার সামনে রয়েছে কড়া পাহারা৷ তিন জন সশস্ত্র পুলিশ প্রহরীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে তাকে৷ সকাল থেকে দফায় দফায় সুশান্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) সুবিমল পাল সহ উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসাররা৷ এদিকে, ঘটনার তদন্তে সিআইডি-র চার সদস্যের ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞের একটি দল জেলায় এসে পৌঁছেছে। তাঁরা সুশান্তর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ছুরি, ব্যাগ, জামায় হাতের ছাপের ছবি সংগ্রহ করেছে। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, ঘটনাস্থল থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করতে জেলায় আসবে ফরেন্সিক দল৷ তবে এখনই তার প্রয়োজন নেই বলে বিশ্বস্ত সূত্রে দাবি। এদিকে, আদালতের নির্দেশে দশ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকবে সুশান্ত৷ এই সময়ের মধ্যেই অভিযুক্তকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবে বহরমপুর থানার পুলিশ।
সুশান্ত পুলিশকে জেরায় সহযোগিতা করছে বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের। জেরায় পুলিশের সামনে সে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে বলেই সূত্রের খবর। সুশান্তের কথায়, সুতপার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল৷ কিন্তু, শেষ দিকে তাকে এড়িয়েই চলছিল সুতপা। সুতপার সঙ্গে আর কারও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টাও করেছিল৷ কিন্তু তা জানতে পারেনি৷ সুতপাকে ফোন করলে বা মেসেজ করলে তার কোনও উত্তর দিত না বলেই জানায় সুশান্ত। সেখান থেকেই রাগ জন্মাতে থাকে তার৷
বহরমপুর শহরের সঙ্গে বেশ ভালোই পরিচিতি ছিল সুশান্তের৷ গত ২৮ মার্চ ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছিল, শহরের লালদিঘির কাছের একটি দোকানে ‘গার্ল-ফ্রেন্ডের’ সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছে সুশান্তি৷ ২ মে সুতপাকে খুনের তিন দিন আগেও বহরমপুরে এসেছিল সুশান্ত। ওই এলাকায় চায়ের দোকানে বসে চা-ও খায়৷ সুতপা কখন কোথায় যেত, কখন মেসে ফিরত, আড়াল থেকে সব কিছুর উপর নজর রাখছিল৷ ওই রাস্তায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজগুলি খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>