কলকাতা: আলোর রোশনাই, চোখ ধাঁধানো জলসায় রূপকথার বিয়ে৷ কিন্তু বছর ঘুরতেই বিষাদের সুর৷ রসহ্যজনক ভাবে মৃত্যু হল শিল্পপতি পরিবারের বধূ রসিকা আগরওয়াল জৈনের৷ তাঁর মৃত্যু আত্মহত্যা? নাকি খুন? রহস্য ঘনাতে শুরু করেছে৷
আরও পড়ুন- শিল্পপতি পরিবারে বধূর রহস্যমৃত্যু, আত্মহত্যা? নাকি খুন!
২০১৯ সালে আলিপুরের রাজা সন্তোষ স্কোয়ার রোডের নামজাদা ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে রসিকা জৈনের সঙ্গে বিয়ে হয় আলিপুরেরই ডিএলখান রোডের ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে কুশল আগরওয়ালের৷ দুই পরিবারের পছন্দেই বিয়ে হয়েছিল তাঁদের৷ কিন্তু বছর ঘুরতেই ঘটল করুন পরিণতি৷
রসিকা ছিলেন মহাদেবী বিড়লা গার্লস স্কুলের ছাত্রী৷ সেখান থেকে স্কুল পাশ করার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন৷ এর পর চলে যান সিঙ্গাপুর৷ সেখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে ফের কলকাতায় ফেরেন শিল্পপতি কন্যা৷ তিনি ছোট থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী৷ পরিবারের পছন্দ করা পাত্রের সঙ্গে বেঁধেছিলেন গাঁটছড়া৷ তাঁদের বিয়ে হয়েছিল রাজকীয় ভাবে৷ বিয়ের আসর বসেছিল রাজস্থানের উমেদ ভবনে৷ গত বছর ধুমধাম করে বিবাহবার্ষিকীও পালন করেন তাঁরা৷ কিন্তু লকডাউনে ঘরবন্দি হতেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে৷ তাল কাটতে থাকে জীবনের৷
সন্দেহ যখন বিশ্বাসে পরিণত হয়, তখন নিজের পরিবারে সবটাই জানিয়েছিলেন রসিকা৷ তিনি জানান, তাঁর স্বামী কুশল মাদকাসক্ত৷ এমনকী শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গেও সেই ভাবে বনিবনি হচ্ছিল না তাঁর৷ রসিকাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন কুশল৷ বাধ্য হতেই তিনি হাত পেতেছিলেন ভাইয়ের কাছ৷ ডিজিটাল ওয়ালেটে টাকা পাঠাতে বলতেন৷ এমনকী খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থার মাধ্যমে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় খাবার পাঠাতেও বলতেন ভাইকে৷
রাজকীয় ভাবে উমেদ ভবনে যখন চারহাত এক হয়েছিল, তখন কেউ হয়তো ভাবতেও পারেনি যে আলোর পিছনেই লুকিয়ে রয়েছে ঘুটঘুটে অন্ধকার৷ বিলেতের ডিগ্রি থাকা রসিকার অকাল মৃত্যু নিয়ে ঘনাচ্ছে রহস্যের জাল৷ পরিবারের অভিযোগ, পড়ে গিয়ে নয়, তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল! টুইটারে ‘জাস্টিস ফর রসিকা’ নামে একটি পেজও খোলা হয়েছে। যেখানে ইতিমধ্যেই একের পর এক টুইট প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে৷
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় রসিকার৷ কিন্তু গত কয়েকদিন সে ভাবে পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ৷ আজ রসিকার বাপের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পৌঁছয় পুলিশ৷ আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে তাঁর পরিবার৷
জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পর আলিপুর থানায় অভিযোগ জানায় রসিকার পরিবার৷ এর পর মাত্র একদিন দু’জন পুলিশ অফিসার এসেছিলেন৷ তার পর থেকে আর কোনও তদন্ত হয়নি৷ অভিযোগ, রসিকার দুটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড সেটাও বাজেয়েপ্ত করা হয়না৷
আরও পড়ুন- ত্রিপুরা মডেলে বাংলায় নির্বাচন হবে! হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
জানা গিয়েছে, বিয়ের পর থেকেই রসিকার উপর অত্যাচার হচ্ছিল৷ টাকা পয়সা চাওয়া হচ্ছিল৷ রসিকার বাবা-মায়ের অভিযোগ, রসিকার উপর এত বেশি চাপ দেওয়া হচ্ছিল যে, আর অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলেন না৷ তাই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় তাঁদের ছোট মেয়ে৷
কুশল আগরওয়ালের পরিবারের অভিযোগ, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন রসিকা৷ তবে আত্মহত্যার আগে বাবাকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছিলেন রসিকা৷ সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকদের সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু পারিবারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার ভয়ে তাঁরা চুপ থাকেন৷ তার জেরেই হয়তো একালে চলে গেল একটা তাজা প্রাণ৷