শিল্পপতি পরিবারে বধূর রহস্যমৃত্যু, আত্মহত্যা? নাকি খুন!

শিল্পপতি পরিবারে বধূর রহস্যমৃত্যু, আত্মহত্যা? নাকি খুন!

কলকাতা: দুই অভিজাত পরিবার৷ উভয়েই শহরের সফল শিল্পপতি৷ দুই পরিবারের মধ্যে গড়ে ওঠা বৈবাহিক সম্পর্কে বছর ঘুরতেই বিষাদের সুর৷ ঘটল রহস্য মৃত্যু৷ 

২০১৯ সালে আলিপুরের রাজা সন্তোষ স্কোয়ার রোডের নামজাদা ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে রসিকা জৈনের সঙ্গে বিয়ে হয় আলিপুরেরই ডিএলখান রোডের ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে কুশল আগরওয়ালের৷ কিন্তু বছর ঘুরতেই রহস্যমৃত্যু হল রসিকা আগরওয়াল জৈনের৷ জানা গিয়েছে, উপর থেকে পড়ে গিয়ে মৃতু হয়েছে তাঁর৷ তবে তাঁর মৃত্যু কি নেহাতই দুর্ঘটনা? নাকি খুন? নাকি আত্মহত্যা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করেছে গোয়েন্দা বিভাগ৷ 

২০১৯ সালে দেখাশোনা করেই বিয়ে হয়েছিল রসিকা ও কুশলের৷ রসিকা ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন৷ তিনি ছিলেন পরিবারের ছোট মেয়ে৷ গত বছর লকডাউন শুরু হওয়ার আগে ধুমধাম করে বিবাহবার্ষিকীও পালন করেছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু লকডাউনে ঘর বন্দি হতেই সুখী দাম্পত্য জীবনের ঘোর কাটে রসিকার৷ সন্দেহ ছিলই৷ লকডাউনে সেই সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয়৷ রসিকা জানতে পারেন তাঁর স্বামী কুশল মাদকাসক্ত৷ এছাড়াও নানা কারণে অশান্তি বাড়ছিল৷ বাড়ছিল তাঁর উপর অত্যাচার৷ শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে চলতে অসুবিধা হচ্ছিল৷ সে কথা নিজের পরিবারকেও জানিয়েছিলেন রসিকা৷ 

শ্বশুরবাড়ির পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছিল তাঁর কাছে৷ এক সময় নিজের ভাইয়ের কাছে হাত পাততেও দ্বিধা করেননি তিনি৷ এমনকী ভাইকে খাদ্য সরবহারকারী সংস্থার মাধ্যমে তাঁর শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় খাবার পাঠাতেও বলতেন রসিকা৷ এ প্রসঙ্গে রসিকার ভাই ঋষভ জানান, দিদি তাঁকে ডিজিটাল ওয়ালেটে টাকা ভরে দিতে বলতেন৷ মাঝেমধ্যে খাবার পাঠাতেও বলতেন৷ তিনি আরও জানান, রসিকার শ্বশুরবাড়িতে প্রায়ই অশান্তি, চিৎকার-চেঁচামেচি হত৷ রসিকাকে টাকা পয়সা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন কুশল৷  

কিন্তু কী ভাবে উঁচু থেকে পড়ে গেলেন রসিকা? নাকি ঠেলে ফেলে দেওয়া হল? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন৷ তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ছাদের নীচে তাঁর দেহ পাওয়া যায়৷ তবে কি তাঁর মৃত্যুতে শ্বশুরবাড়ির প্ররোচনা ছিল? লাগাতার অত্যাচারেই কি আত্মঘাতী হলেন রসিকা? রসিকার মৃত্যুর কারণ খুঁজছে তাঁর পরিবারও৷ অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে রসিকার মৃত্যুর কারণ ধামাচাপা দিতে চাইছে তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোক৷ এই মৃত্যুর পিছনে যে রসহ্য লুকিয়ে রয়েছে, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত৷ এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগও উঠেছে৷ এবিষয়ে শ্বশুর বাড়ির কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি৷

জানা গিয়েছে, রসিকা তাঁর বাবাকে যে হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়েছিলেন, সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকের সম্পর্কে বেশ কিছু অভিযোগ করেছিলেন৷ রসিকার মা বলেন, কুশল শুরু থেকেই টাকা পয়সার জন্য রসিকার উপর অত্যাচার করত৷ বাপের বাড়ি আসতে দিতে চাইত না৷ এমন একটা চড় মেরেছিল যে, তাঁর একটি চোখে সমস্যা হয়ে যায়৷ সারা রাত আশান্তি করার পর সকালে ক্ষমা চাইত৷ এই জন্য চুপ থাকত রসিকাও৷ 

কিন্তু প্রশ্ন হল, মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে সমস্যার কথা জেনেও কেন চুপ করে থাকল রসিকার পরিবার?  জানা গিয়েছে, পারিবারিক সম্মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার ভয়েই তাঁরা চুপ ছিলেন৷ চেয়েছিলেন নিজেদের মধ্যে বসে সমস্যা মিটমাট করে নিতে৷ কিন্তু সেই সময় আর পাওয়া গেল না৷ সমাধানের আগেই সব শেষ৷      
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 5 =