আসানসোল: করোনা সংক্রমণ রুখতে সেই মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল৷ তবে থেকে ঘরবন্দি পড়ুয়াদের জীবনও৷ পড়াশোনা চলছে অনলাইনে৷ এই ক’মাসে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ বন্ধুদের সঙ্গেও৷ উৎসবের মরশুমে আরও বেশি মন খারাপ প্রিয় বন্ধুর জন্য৷ ঘর বন্দি থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে উঠেছে অনেকেই৷ সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমান জুড়ে দেখা দিয়েছে ঘর ছাড়ার হিড়িক৷ প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ছে নাবালিকারা৷ অধিকাংশেরই সঙ্গী নাবালক সহপাঠী৷ কারও কারও সঙ্গী আবার পাড়ার দাদা কিংবা ফেসবুক ফ্রেন্ড৷
আরও পড়ুন- পাখির চোখ ২১-এর ভোট, কলকাতায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বিজেপি নেতৃত্ব
গত এক মাসে নাবালিকা অপহরণ বা নিখোঁজের মামলার সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে পশ্চিম বর্ধমানে৷ গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১২ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ৷ প্রেমিকের হাত ধরতেই তাদের বাড়ি ছাড়া৷ বাড়ি থেকে বেরিয়ে দীঘা থেকে দিল্লি, বিভিন্ন জায়গায় পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের৷ পশ্চিম বর্ধমান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান রীতা বসু বলেন, ‘‘উৎসবের মরশুমে আমরা একাধিক নাবালিকা পড়ুয়াকে উদ্ধার করে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বদ্ধ জীবনে তারা হাঁফিয়ে উঠছে। তাই সুযোগ বুঝে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছে। নাবালক-নাবালিকাদের মধ্যে এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে৷ ডিজিটাল যুগে দীর্ঘ দিন ঘর বন্দী থাকতে থাকতে ছেলে মেয়ারাও অস্থির হয়ে পড়ছে৷ পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের জীবন কাটত হইহুল্লোড় কর৷ সিনেমা দেখা, রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়া করাটা তাদের জীবনের অঙ্গ ছিল৷ প্রেমিকের হাত ধরে পার্কে বসা তো ফ্যাশন৷ কিন্তু দীর্ঘ লকডাউন আর স্কুল বন্ধ থাকায় এসবে ছেদ পড়েছে৷ সেকারণেই তারা এখন বাড়ি ছাড়ছে৷
আরও পড়ুন- এক ধাক্কায় অনেকটা কম ভাইরাস সংক্রমণ! স্বস্তি পেল পশ্চিমবঙ্গ
এক অপ্রাপ্তবয়স্ক যুগলের কাণ্ডকারখানা দেখে রীতিমতো হতবাক চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির সদস্যরা। জানা গিয়েছে, আসানসোলে একটি বিখ্যাত বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া তারা৷ সম্প্রতি বাড়ি থেকে পালিয়ে তারা দীঘায় গিয়ে ওঠে৷ সেখানে নিজেদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও রেকর্ড করে রাখে। তাদের উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পর সেই ছবি দেখিয়েই পরিবারের লোকজনকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে৷ তাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য উল্টো চাপ দেওয়া শুরু হয়৷ আবার ফেসবুকে ভাব জমানো এক যুবকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিল এক নাবালিকা। দিল্লি চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি৷ কটোয়া থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ৷ উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার এই প্রবণতাকে সামাজিক অবক্ষয়ের লক্ষণ বলেই উল্লেখ করেছেন চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির সদস্য অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়৷