কলকাতা: রাজ্যে কর্ম সংস্থানের খতিয়ান তুলে এবার সোচ্চার হলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ রাজ্যে এক কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি৷
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এসে বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে সরাসরি ১ কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন৷ রাজ্যে বেকারত্ব কমেছে ৪০ শতাংশ৷ অথচ সমগ্র ভারতে বেকারত্ব ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে৷ রাজ্যে সিলিকন ভ্যালি তৈরি করা হচ্ছে৷ যা তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি মাইল ফলক হতে চলেছে৷ এতদিন বলা হত হায়দরাবাদ ভারতবর্ষকে পথ দেখাচ্ছে৷ কিন্তু বাংলায় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় যে কর্ম সংস্থান তৈরি হতে চলেছে তা হায়দরাবাদ এবং বেঙ্গালুরুকেও হার মানাবে৷ তিনি জানান, এই সিকল ভ্যালিতে চাকরি হবে ৬১ হাজারেরও বেশি যুবক যুবতীর৷ যা বেঙ্গালুরুকেও পিছনে ফেলে দেবে৷
আরও পড়ুন- আরও বাড়ল আক্রান্ত কৈলাসের নিরাপত্তা! পেলেন দুধ সাদা ‘ভিআইপি কার’
শোভনদেব জানান, আগামী দিনে অ্যামাজন লজিস্টিক হাবে ২০ হাজার, টিসিএসের নতুন শাখায় ২০ হাজার, আইবিএম-এ ১৫ হাজার এবং উইপ্রোতে ১০ হাজার কর্ম সংস্থান তৈরি হবে৷ এছাড়াও গতিধারা প্রকল্পে ২৮ হাজারের বেশি যুবক যুবতীকে গাড়ি দেওয়া হয়েছে৷ যারা এখন স্বনির্ভর৷ এছাড়াও ৬ লক্ষ যুবক যুবতীকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ তাজপুরে সমুদ্র বন্দরে ২৫ হাজার কর্ম সংস্থান তৈরি হতে চলেছে৷ ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মধ্যম (এমএসএমই) ক্ষেত্রে চাকরিতে এক নম্বরে রয়েছে বাংলা৷ খোদ কেন্দ্রীয় সরকার এই স্বীকৃতি দিয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এক সময় প্রধনমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, বৃহত্তর শিল্পে না পারলে আমরা ক্ষুদ্র শিল্পের দিকে এগোব৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুকরণ করেই একথা বলেছিলেন তিনি৷’’ এছাড়াও বিবেকানন্দ স্বনির্ভর কর্ম সংস্থান প্রকল্পে ছোট দোকান থেকে কারখানা যে কোনও ক্ষেত্রে কাজের জন্য সরকারের তরফে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
অন্যদিকে, তৃণমূলের রিপোর্ট কার্ডকে অস্বীকার করে তাদের ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য৷ তিনি বলেন, গত দশ বছরে তৃণমূল সরকার মানুষের সামনে উন্নয়নের যে খতিয়ান তুলে ধরেছে, তার সঙ্গে বাস্তবের প্রায় কোনও মিল নেই৷ বর্তমানে রাজ্যে কোনও বিনিয়োগ নেই৷ তিনি জানান, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়াদের শেষ সময় রাজ্যে বিনিয়েগোর পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা৷ তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বছর বিনিয়োগ ছিল ৩১৮ কোটি টাকা৷ এর পর থেকে কোনও ভাবেই বিনিয়োগের প্রকৃত চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়নি৷ কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু নিয়ম মাফিক বিনিয়োগ বা কিছু মৌ চুক্তি সামনে এনে বিনিয়োগের খতিয়ান দেখানোর চষ্টা করেছে শাসক দল৷ কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী যে বিনিয়োগের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তার ১ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে৷
আরও পড়ুন- প্রশাসনে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ! ১৯ অবসরপ্রাপ্ত IPS-এর তালিকা ফাঁস রাজ্যপালের!
তাঁর আরও দাবি, গত দশ বছরে আড়াই হাজার কোটির বেশি বিনিয়োগ রাজ্যে হয়নি৷ বিভিন্ন শিল্পপতি বাংলায় এলেও পরে তাঁরা মুখ ঘুরিয়ে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন৷ কর্মসংস্থান বা চাকরির পরিসংখ্যানের সঙ্গেও বাস্তবের কোনও মিল নেই৷ ডিজিপি-তে রাজ্যের স্থান ৩১৷ ব্যক্তিগত আয়ের হিসাবে বাংলার স্থান ২২ নম্বরে৷ তিনি জানান, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রাজ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকা৷ এখন তা বেড়ে সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা পেরিয়ে গিয়েছে৷ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রেও তৃণমূল সরকার ব্যর্থ বলেই সুর চড়ান তিনি৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা চলছে৷ বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে৷ যারা শিল্প বান্ধব কথা বলছেন, কৃষকদরে কথা বলছেন৷ কিন্তু এই রাজ্যে কৃষকদের অবস্থা কী তা সারা দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে৷