কলকাতা: সকালে ট্রেনের হুইসাল বাজার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাঁর লড়াই৷ গানের ঝুলি কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ‘গানের ফেরিওয়ালা’! তাঁর ঝুলিতে আছে অনেকের কণ্ঠ৷ কখনও তিনি কেকে, কখনও হয়ে ওঠেন কুমার শানু, কখনও আবার কিশোর কুমার৷ সেই অর্থে খ্যাতি জোটেনি কখনই৷ তাঁর কাছে মঞ্চ বলতে ট্রেনের কামরা আর শ্রোতা বলতে ট্রেনের যাত্রীরা৷ মাইক হাতে তাঁদের গান শুনিয়েই চলে তাঁর জীবন যুদ্ধ৷
আরও পড়ুন- RG Kar: স্যালাইন-ইঞ্জেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শেষ! স্ত্রীর মৃত্যুতে হতবাক স্বামী
বড় মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ কোনও দিন পাননি৷ তাই সংসারের অভাব মেটাতে ট্রেনের কামরাকেই বেছে নেন বর্ধমান জেলার বর্ধমান-১ ব্লকের নিত্যানন্দপুরের মিলন কুমার৷ তবে চোখে-মুখে যন্ত্রণার ছাপ নয়, বরং ঠোঁটে চওড়া হাসি নিয়েই সারা দিন গান গেয়ে চলেন মিলন৷ কেকে-র মৃত্যুর পর তাঁর গান গেয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তিনি৷ তাঁর কণ্ঠেই যেন ফের বেঁচে উঠেছেন প্রয়াত শিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নথ৷
বাড়ি বলতে বাঁশ দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট ঘর৷ মাথায় ত্রিপলের আচ্ছাদন৷ সংসারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী৷ পরিবারে রয়েছেন অসুস্থ বাবা-মা, স্ত্রী, দুই সন্তান আর বোন৷ সংসারের পেট চালাতে সকাল হতেই গানের সরঞ্জাম কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মিলন৷ গন্তব্য বর্ধমান স্টেশন৷ সেখান থেকে ভিড়ে ঠাসা বর্ধমান-কাটোয়া লোকালে উঠে পড়েন তিনি৷ সুরে সুরে ভরিয়ে দেন যাত্রীদের যাত্রাপথ৷ শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, সব ঋতুতেই দেখা মেলে মিলনের৷ তাঁর গান শুনে যাত্রীরা খুশি হয়ে যা দেন, সেটাই তাঁর উপার্জন৷ আবার এমন অনেক যাত্রীই রয়েছেন, যারা কোনও টাকাই দেন না৷ তবে এর জন্য কোনও ক্ষোভ নেই তাঁর৷ যে দিন যেমন জোটে, তাতেই সন্তুষ্ট তিনি৷ মুখ থেকে হাসি কখনও মিলিয়ে যায়নি৷ শত কষ্টের মাঝেও তিনি প্রণোচ্ছ্বল।
ছোট থেকেই গান ভালোবাসেন মিলন। কিন্তু সুরের পথে কাঁটা হয়ে বিছিয়েছিল আর্থিক অনটন৷ যেটুকু শিখেছেন তা বাবা রাজীব শেখের কাছ থেকেই। তাঁর দেখানো পথেই ট্রেনে গান ‘ফেরি’ করা তাঁর। স্বপ্ন, কোনও একদিন বড় মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ আসবে। কুমার শানু বা উদিত নারায়ণের মতো বিখ্যাত গায়কদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেবেন৷ দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে করতেই স্বপ্ন দেখেন মিলন। স্বপ্নেও চলে তাঁর রেওয়াজ৷ নতুন ভোরের আশায় দিন গোনেন এই শিল্পী৷ যদি সত্যি আসে সুযোগ!
যদিও মিলনের এই ট্রেনে গান গাওয়াটা একেবারেই না-পসন্দ স্ত্রী রেজিনা শেখের। কারণ গান গেয়ে মিলন যে টাকা রোজগার করেন, তা দিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। গান ছেড়ে অন্য কোনও কাজ শুরু করার জন্য জোরও দিয়েছিলেন তিনি। গান গেয়ে উপার্জন করা ওইটুকু টাকায় ছেলেদের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, ডাক্তার-ওষুধ কোনও যে ঠিক মতো হয় না। তবে স্বামীর এই গান ভাইরাল হতেই বেজায় খুশি স্ত্রী। যেই ব্যক্তি মিলনের গান সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তাঁকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন রেজিনা৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>