হৃদযন্ত্রদাতার বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে! অবিকল একইভাবে মৃত্যু গ্রহীতার, এ এক গভীর রহস্য

হৃদযন্ত্রদাতার বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে! অবিকল একইভাবে মৃত্যু গ্রহীতার, এ এক গভীর রহস্য

কলকাতা: কাকতালিয়? নাকি কোনও রহস্য? যাঁর হৃদপিণ্ডে প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন, তাঁর মতোই ঘটল জীবনের চরম পরিণতি৷ 

১২ বছর আগের ঘটনা৷ অস্ত্রোপচার করে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন সনি গ্রাহাম। যাঁর কাছ থেকে হৃদ্‌যন্ত্রটি পেয়েছিলেন, পরবর্তীতে তাঁরই বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করেন তিনি। তবে এখানে লুকিয়ে রয়েছে একটি চমক৷ যে ভাবে মৃত্যু হল গ্রাহামের, ঠিক সে ভাবেই মারা গিয়েছিলেন তাঁর হৃপিণ্ডদাতা। অবিকল এক ভাবে আত্মহত্যা করেন দু’জনে। 

আরও পড়ুন- ‘নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া সম্ভব নয়’, রাষ্ট্রপুঞ্জে ‘বন্ধু’ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট ভারতের

যাঁর কাছ থেকে গ্রাহাম হৃদ্‌যন্ত্রটি পেয়েছিলেন, তাঁর নাম টেরি কোটল। মৃত্যুর সময় টেরির বয়স ছিল মাত্র ৩৩। জীবন ফিরে পাওয়ার পর টেরির বিধবা স্ত্রীকেই বিয়ে করেন গ্রাহাম। 

গ্রাহাম যখন মারা যান, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। এই ঘটনার তদন্তের পর পুলিশ জানায়, গ্রাহামকে খুন করা হয়নি৷ তাঁর মৃত্যুর অন্য কোনও কারণও নেই৷ আত্মহত্যাই করেছিলেন তিনি। বাড়ির পিছন থেকে উদ্ধার হয়  গ্রাহামের মৃতদেহ৷ 

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সি পাইনসে ‘হেরিটেজ গল্ফ টুর্নামেন্টের’ পরিচালক ছিলেন সনি গ্রাহাম। ১৯৯৫ সালে তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকরা জানান,  হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করতে হবে৷ তা না হলে বাঁচানো সম্ভব নয়।

এমন সময় গ্রাহাম জানতে পারেন চার্লসটনে এক জনের হৃদ্‌যন্ত্র দান করা হবে৷ চিকিৎসকরা জানান, মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সদস্যেরা অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এর পরই টেরির হৃদ্‌যন্ত্র গ্রাহামের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন গ্রাহাম। হৃদ্‌যন্ত্র দানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে টেরির পরিবারকে একের পর এক চিঠি পাঠান তিনি। ধীরে ধীরে টেরির বিধবা স্ত্রী চেরিল কোটলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁর৷ ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে দেখা করেন তাঁরা। চেরিলের বয়স তখন মাত্র ২৮৷ এর পর থেকে নিয়মিত ভাবে মোলাকাত হতে থাকে তাঁদের৷  বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে তৈরি হয় প্রেম।

২০০১ সালে চেরিল এবং তাঁর চার সন্তানের জন্য ভিডালিয়াতে একটি বাড়ি কেনেন গ্রাহাম। তিন বছর পর, গ্রাহাম হিলটন হেডের হারগ্রে কমিউনিকেশনের প্ল্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন৷ ২০০৪ সালে আই ডু বলেন চেরিলকে। প্রথম বিয়ে থেকে এই দুই যুগলের মোট ছয় সন্তান এবং ছয় নাতি-নাতনি ছিল।

গ্রাহামের সঙ্গে বিয়ের পর চেরিল জানান, তাঁর প্রথম স্বামী টেরির মৃত্যু এক রহস্য৷ টেরি কেন আত্মহত্যা করেছিলেন তা তাঁর অজানা৷ কারণ, আত্মহত্যার আগে পর্যন্ত টেরির ব্যবহারে কোনও বদল তিনি লক্ষ্য করেননি৷ তবে বিয়ের পর বেশ সুখেই সংসার করছিলেন গ্রাহাম এবং চেরিল৷ ২০০৮ সালে ঘটে ছন্দপতন। হঠাৎই আত্মহত্যা করে বসেন গ্রাহাম। টেরির মতোই মুখে শটগানের নল ঠেকিয়ে গুলি চালান। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তাঁর।

গ্রাহামের মৃত্যুর পর ফের মাথাচাড়া দেয় টেরির মৃত্যুরহস্য৷ কী করে একই ভাবে আত্মহত্যা করলেন চেরিলের প্রাক্তন এবং বর্তমান স্বামী, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠে। পুলিশও ধন্দে পড়ে যায়। অনেকের দাবি, এটা আসলে ‘টেরির আত্মার প্রতিহিংসা’। কারও অভিযোগ, দুই স্বামীকে একইভাবে খুন করেছেন চেরিল৷ যদিও তদন্ত শেষে পুলিশ দাবি করে, টেরি ও গ্রাহাম দু’জনই আত্মহত্যা করেছেন।

এই ঘটনার পর একাংশের অভিমত, টেরির শরীরে এমন কোনও জিন ছিল, যা হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের সময় কোনও ভাবে গ্রাহামের শরীরে ঢুকে যায়। টেরির মতো গ্রাহামের আত্মহত্যার জন্যেও দায়ি সেই জিন৷