দেওয়া হল না মেয়ের মুখেভাত, ভারত-পাক সীমান্তে শহিদ তেহট্টের জওয়ান

দেওয়া হল না মেয়ের মুখেভাত, ভারত-পাক সীমান্তে শহিদ তেহট্টের জওয়ান

তেহট্ট: আর ক’দিন পরেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর৷ ছুটির আবেদনও করে রেখেছিলেন৷ বাড়ি এসে মেয়ের মুখেভাতের আয়োজন করবেন নিজের হাতে, এমনটাই কথা ছিল৷ ডিসেম্বরে অন্নপ্রাশনের তারিখও ঠিক হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু সেই আয়োজন আর করা হল না৷ তিনি বাড়ি ফিরবেন ঠিকই, কিন্তু কফিন বন্দি হয়ে৷ শুক্রবার পাক সেনার ছোড়া গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে নদীয়ার তেহট্ট থানার রঘুনাথপুর গ্রামের ছেলে সুবোধ ঘোষের (২৪) শরীর৷ দেশ রক্ষায় শহিদ হয়েছেন তিনি৷

আরও পড়ুন- প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দলীয় অনুষ্ঠান এড়ালেন জলপাইগুড়ির হেভিওয়েট নেতারা

গতকাল বিকেলে কাশ্মীর থেকে ফোন আসে সুবোধের স্ত্রীর ফোনে৷ স্বামীর শহিদ হওয়ার খবর পেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি৷ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নামে রঘুনাথপুরে৷ দীপাবলির ঘন অমাবস্যা নামার আগেই অন্ধকার ডুবে যায় সুবোধের গ্রাম৷ একরত্তি মেয়েকে আঁকড়ে ধরে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন সুবোধের স্ত্রী৷ গৌরাঙ্গ ঘোষ এবং বাসন্তী ঘোষের একমাত্র সন্তান সুবোধ ২০১৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন৷ ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর তাঁর প্রথম পোস্টিং হয় পঞ্জাবে৷ তার পর তাঁকে পাঠানো হয় কাশ্মীরে৷ মাত্র এক বছর আগেই অনিন্দিতার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুবোধের৷ এই বছর অনিন্দিতার কোলে আসে তাঁদের সন্তান৷ জুলাই মাসে ৪০ দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন সুবোধ৷ তার পর ফিরে যান কাশ্মীর সীমান্তে৷ বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা হয় সুবোধের৷ ছেলে হারানোর শোকে চোখের জল বাধ নামছে না বাসন্তীদেবীর৷ চোখের জল ফেলতে ফেলতেই তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতেও ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি৷ ৯টার নাগাদ ফোন করেছিল ও৷ আমরা ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম৷ ডাক্তার কী বলল, তাও জানতে চায়৷ এদিন সকালে অনেকবার ফোন করেছিলাম৷ কিন্তু ফোন ধরেনি৷ রিং হয়ে কেটে যায়৷ পরে ফোনটা সুইচ অফ হয়ে যায়৷’’       

আরও পড়ুন- বাজি পোড়ালেই হতে পারে ৫ বছরের জেল, ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা

গতকাল রঘুনাথপুরের বাড়িতে দুঃসংবাদটা আসে বিকেল চারটে নাগাদ৷ ফোন করা হয় অনিন্দিতার ফোনে৷ এক মেজর ফোন করে সুবোধের শহিদ হওয়ার খবরটা জানান৷ বাসন্তীদেবী বলেন, ‘‘আমি বৌমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়েছিলাম৷ তারপরই ছেলে হারানোর খবর শুনি৷’’ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর গৌরাঙ্গবাবুও৷ এক সময় গৌরাঙ্গবাবুর টালির ছাউনি দেওয়া একটা ঘর ছিল৷ ছেলে চাকরি পাওয়ার পর সেই জায়গায় আজ দাঁড়িয়ে রয়েছে দোতলা বাড়ি৷ তবে সামান্য কিছু কাজ এখনও বাকি রয়ে গিয়েছে৷ সেই কাজ আর শেষ করে যেতে পারলেন না সুবোধ৷  

অনিন্দিতা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল আমাদের৷ বলেছিল শীত আসছে, মেয়েকে সোয়েটার কিনে দিতে…৷’’ কোনও কিছু বোঝার আগেই বাবাকে হারাল এই একরত্তি৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + nine =