Aajbikel

রাজ্য রাজনীতিতে কীভাবে উত্থান অনুব্রতর? কী কী অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে?

 | 
অনুব্রত

কলকাতা: এক কথায় তিনি ছিলেন বীরভূমের বেতাজ বাদশা৷ তিনি বিধায়ক নন, সাংসদ নন, শহরের রাজনীতিতে পরিচিত হেভিওয়েট নেতা নন। কিন্তু তারপরেও তাঁর নামে এক ঘাটে জল খেত বাঘে গরুতে৷ সেই অনুব্রত মণ্ডলই এখন গরু পাচার মামলায় ইডি-র হাতে বন্দি৷ আসানসোল থেকে কলকাতা হয়ে ঠাঁই হয়েছে দিল্লিতে৷  আপাতত তিনদিন ইডি-র হেফাজতেই থাকবেন তিনি।

আরও পড়ুন- দোলের দিন দিঘায় নেই জনস্রোত! 'অবাক কাণ্ডে' নয়া আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

অনুব্রত বোলপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিচু পট্টির বাসিন্দা হলেও তাঁর আসল বাড়ি বীরভূমের নানুরের হাট সেরান্দি গ্রামে। তাঁরা তিন ভাই। তিনি মেজ৷ অষ্টম শ্রেণী পাস করার পর বাবার মুদিখানার দোকান চালানোর দায়িত্ব নেন। তাঁদের একটি গ্রিলের কারখানাও ছিল, সেটিও সামলাতেন অনুব্রত। পাশাপাশি খেলতেন ফুটবলও৷ পরে সে সব ছেড়ে বোলপুর বাজারে নিজের মাছের দোকান খেলেন৷ দিনের শেষে রোজগার হত বড় জোড় ৫০-৬০ টাকা। সেখান থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন বীরভূমের মুকুটহীন সম্রাট।


কী ভাবে উত্থান তাঁর? প্রয়াত চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজনীতির আঙিনায় পা রেখেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। পরে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তিনি এখন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। অনুব্রতর তখন ৩০ বছর বয়স৷  গ্রামেরই মেয়ে ছবি’র সঙ্গে প্রেম হয় তাঁর। সেখান থেকে বিয়ে। অনুব্রতর শ্বশুরমশাইয়ের ছিল ট্যুর–ট্রাভেলের ব্যবসা৷ বোলপুর বাজারে তাঁর একটি জুতোর দোকানও ছিল। বিয়ের পর থেকেই আর্থিক অবস্থা ঘুরতে শুরু করে অনুব্রতর। ১৯৯১ সালে তাঁদের একমাত্র কন্যা সন্তানের জন্ম হয়৷ 


এরপর প্রোমোটিং-এর ব্যবসাও শুরু করেন কেষ্ট। পার্টনার ছিলেন চন্দ্রনাথ সিং। এই চন্দ্রনাথ সিং এখন রাজ্যের মন্ত্রী। অনুব্রত মণ্ডল যখন জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দলীয় কাজে বীরভূমে এসে অনুব্রতর সঙ্গে দেখা হয় মমতার। তখনই ডাকাবুকো স্বভাবের অনুব্রত আলাদাভাবে নজর কেড়েছিল তাঁর৷ পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্ত সহায়ক গৌতম বসুর মাধ্যমে তিনি তৃণমূল নেত্রীর আস্থা লাভ করনে। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদরের কেষ্ট।

মাছের দোকান ছেড়ে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখার পরই বদলে গিয়েছিল চিত্রটা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে অনুব্রত মণ্ডলের উপার্জন। সময়ের স্রোতে তিনি পৌঁছে যান ক্ষমতার শিখরে৷ পাল্লা দিয়ে বাড়ে রোজগারও৷ শুধু তাই নয়, বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির আয় পৌঁছয় সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে। জানেন দিনে কত টাকা আয় করতেন কেষ্ট? দিনে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা! গরু-কয়লা পাচার থেকে বেআইনি বালি-পাথর খাদান—বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা থেকে এই বিপুল অঙ্কের টাকা এসে জমত কেষ্টর তহবিলে। বীরভূমের ‘মুকুটহীন সম্রাট’-এর সম্পত্তির খোঁজে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য খুঁজে বার করেন সিবিআই-এর গোয়েন্দারা। 

গরু পাচার মামলার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের আয়ের উৎস খুঁজে ফেলেছে সিবিআই। বেনামে থাকা অগাধ সম্পত্তির নথিও এখন গোয়েন্দাদের হাতে। সিবিআই সূত্রে খবর, পাচার হওয়া গরু পিছু আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ‘কমিশন’ ধার্য করে দিয়েছিলেন ‘বীরভূমের বাদশা’। ঈদ-মহরমের মরশুমে সেটাই বেড়ে হত পাঁচ থেকে ছ’হাজার। কয়লার ক্ষেত্রে গাড়ি পিছু ১০ হাজার টাকা ছিল ‘ফিক্সড রেট’। এই ‘প্রোটেকশন মানি’ না দিয়ে বীরভূমের উপর দিয়ে গরু বা কয়লা কোনওটাই পাচার করা যেত না। গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছেন, মোট ২৭টি থানা এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল চোরা পথ। প্রতিটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে মাসিক চুক্তি করা ছিল পাচারকারীদের। এক একটি থানার জন্য মাসে বরাদ্দ থাকত ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল মুর্শিদাবাদে সীমান্তের দু’টি থানা৷ এই দুই থানার জন্য মাসে ভেট যেত এক কোটি টাকা। বালি, পাথর এবং কয়লার ক্ষেত্রেও রেট বাঁধা ছিল। গরু ছাড়াও বালি-পাথর পাচারের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে৷


চড়াম চড়াম থেকে  গুড় বাতাসা, কিংবা নকুলদানা, বিভিন্ন সময় তাঁর ডায়লগ রাজ্য রাজনীতির পারদ চড়িয়েছে৷ বিতর্ক ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী৷ অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনেন দলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডল৷ তিনি জানান, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগদানের জন্য আলোচনা চালাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁকে দুবরাজপুর পার্টি অফিসে ডেকে পাঠান অনুব্রত মণ্ডল। উত্তেজিত হয়ে তাঁর আমার গলা টিপে ধরেন। এই ঘটনায় অনুব্রতর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়৷ এছাড়াও বিভিন্ন সময় তিনি বহু মানুষকে গাঁজা কেসে ফাঁসিয়েছেন বলেও অভিযোগ৷ গত বছর অগাস্ট মাসে গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হন কেষ্ট৷ 


 

Around The Web

Trending News

You May like