মাছ বিক্রেতা থেকে বীরভূমের ‘বাদশা’! কী ভাবে বদলে গেল অনুব্রতর জীবন?

মাছ বিক্রেতা থেকে বীরভূমের ‘বাদশা’! কী ভাবে বদলে গেল অনুব্রতর জীবন?

কলকাতা: ভাগ্যের চাকা কখন কী ভাবে ঘুরে যায়, তা কারোরই জানা নেই৷ জানা ছিল না বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতার নেতা অনুব্রত মণ্ডলেরও৷ ছিলেন মুদি দোকানের মালিক৷ সেখান থেকে বীরভূমের বেতাজ বাদশা৷ কী ভাবে ঘুরল ভাগ্যের চাকা? অনুব্রতর জীবনে নাটকীয় উত্থান চিত্রনাট্যকেও হার মানায়৷ মুদি দোকানি থেকে মাছের ব্যবসায়ী অনুব্রতর জীবনের প্রতি পাতায় রোমাঞ্চ৷ 

আরও পড়ুন- অনুব্রতর খেলা শেষ! আরও অনেক লাইনে আছে, পরপর টুইট-খোঁচা দিলীপের

বীরভূমের নানুরের মণ্ডল বাড়ির মেজো ছেলে অনুব্রত এইট পাশ। বাবার ছিল মুদির দোকান৷ অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে বসে পড়েন সেই দোকানেই৷ কিশোর বয়সে নাকি দারুণ ফুটবল খেলতেন তিনি৷ সে কথা একবাক্যে স্বীকার করেন তাঁর বন্ধুস্থানীয়রাও৷ রাজনীতির আঙিনায় না এলে হয়তো দারুণ ফুটবলার হতেন কেষ্ট। কিন্তু সেটা হয়নি৷ ফুটবল ছেড়ে বোলপুর বাজারে নিজের মাছের দোকান খোলেন তিনি। পাশাপাশি শুরু করেন গ্রিলের ব্যবসা।

প্রথম জীবনে ছিলেন কংগ্রেসের সদস্য৷ তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের পর চলে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরণে৷ রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল খুব অল্প বয়সে৷ ১৪ বছর বয়স পোস্টার লাগানো দিয়ে শুরু। আগোগোড়া ডাকাবুকো ছেলেটা অবশ্য নজর কেড়েছিল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্বের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল বীরভূমে৷ পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন নেত্রীর আপ্তসহায়ক গৌতম বসু। ধীরে ধীরে নিজের ক্যারিশ্মায় মমতার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন কেষ্ট৷ 

১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৈরি করে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তাঁর পথ অনুসরণ করে দলত্যাগ করেন অনুব্রতও৷ যোগ দেন তৃণমূলে৷ তাঁর হাতে সঁপা হয় জেলা যুব তৃণমূলের দায়িত্ব। যুব সভাপতিও হন তিনি। এর পর ২০০১ সালে ১১ জন চাষির মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি৷ সেই সময় বাম বিরোধী আন্দোলনের নেতা হয়ে ওঠেন অনুব্রত মণ্ডল। ২০০৩ সালে মতোবিরোধের জরে সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ালে দায়িত্ব পান কেষ্ট। এর পর নিজের হাতে জেলায় সংগঠনকে সাজিয়ে তোলেন৷ জেলায় যত বেশি করে তৃণমূলের শাখা বিস্তার হয়েছে, নেত্রীর তত কাছের হয়ে উঠেছেন কেষ্ট। ২০১১ সালে তৃণমূলের জয়ের অন্যতম নেপথ্য নায়ক তিনি। প্রবল মোদী ঝড়েও একার হাতে গড় বাঁচিয়েছেন তিনি। অনেককে ভোটে জিতিয়েছেন৷ কিন্তু, নিজে কোনও দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। 

ব্যক্তিগত জীবনে হিন্দি সিনেমা দেখতেও ভীষণ ভালবাসেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। তবে নায়কের থেকে খলনায়কের ডায়লগই বেশি পছন্দ তাঁর। তিনি নিজেও বঙ্গ রাজনীতি কাঁপিয়েছেন উষ্ণ ডায়ালগে৷  ‘শুঁটিয়ে লাল করে দেব’,’নকুলদানা-পাঁচন’ থেকে ‘চড়াম চড়াম’, ‘পুলিশকে মারুন’৷ এর জন্য নেত্রীর ধমকও খেতে হয়েছে তাঁকে৷ নির্বাচন কমিশনের ‘গুঁতোও’ খেয়েছেন। তবুও অনুব্রত বদলাননি৷ গ্রাম্য, মেঠো ভাষাকেই বারবার ভোকাল টনিক করে তুলেছেন তিনি।

বীরভূমের লাল মাটি গায়ে মেখে তিনি আক্রমণ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রীকেও৷ বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য বকুনি খেলেও, তিনি বরাবরই দলনেত্রীর প্রিয়৷ সর্বদাই তাঁকে পাশে পেয়েছেন কেষ্ট। রাজনীতির কারবারিদের কথায়, কেষ্টর বিতর্কিত মন্তব্যই রাজনীতিতে তাঁকে আলাদা মাইলেজ দিয়েছে। তবে তৃণমূলের এই দাপুটে নেতার ভবিষ্যৎ কোন খাতে বইবে, তা সময়ই বলবে৷