কলকাতা: পুলিশের সামনেই মারধর স্বাস্থ্যকর্মীকে। প্রতিবাদ করতেই বরখাস্তের হুমকি কর্তৃপক্ষের! তাহলে সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীরা কি নিরাপদ? এই প্রশ্ন উঠে গেল চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতালে ঘটে যাওয়ার ঘটনায়। পুলিশ কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী বা যে কোনও সরকারি কর্মীকে কর্তব্যরত অবস্থায় মারধর বা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ফৌজদারি অপরাধের শামিল হিসেবে গণ্য করা হয়। বহু ক্ষেত্রেই তা যে মানা হচ্ছে না তার আরও একটি প্রমাণ মিলল এই ঘটনায়।
আরও পড়ুন- একই পরিবারে ১০ জনের চাকরি? প্রশ্ন শুনেই তেড়েফুঁড়ে উঠলেন পার্থের প্রাক্তন দেহরক্ষীর স্ত্রী
ঠিক কী ঘটেছে? জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর চেতলার এক রোগী কলকাতা চিত্তরঞ্জন সেবা সদন ও শিশু সদনে চিকিৎসার জন্য আসেন। রোগীকে বেশ কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে সেগুলি হাসপাতালের ফার্মাসি থেকে নিতে বলা হয়। সেই সময় ফার্মাসিতে দায়িত্বে ছিলেন মিহির রঞ্জন মন্ডল নামের ব্যক্তি। রোগীর পরিবারকে মিহির জানান তাঁদের কাছে যে যে ওষুধ সরবরাহ রয়েছে সেগুলোই দিতে পারবেন। বাকিগুলো বাইরে থেকে কিনে নিতে হবে। এর পরেই রোগীর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের ফার্মাসির মধ্যে ঢুকে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। সাহায্যের জন্য সেই সময় কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক এন সি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গেলেও তিনি কোনও সাহায্য করেননি বলে অভিযোগ।
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত একজন স্বাস্থ্য কর্মীকে এইভাবে রোগীর পরিবার মারধর করা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কোনও রকম সাহায্য না করায় পুরো বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মিহির রঞ্জন মন্ডল। কিন্তু তার আরও অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ বিষয়টি সমঝোতা করে নিতে বলেন। তার এও দাবি, রোগীর পরিবার আদতে শাসকদলের কর্মী সমর্থক তাই এমন ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঙ্গে। মিহির এও জানিয়েছেন, সেদিনের ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছে তার নিরাপত্তা চেয়ে এবং চাকরিতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আবেদন করে বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু তারা কেউই কোনও রকম সাড়া দেননি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
আরও পড়ুন- ফের একদিনে বাড়ল দৈনিক আক্রান্ত, বঙ্গের গ্রাফে চিন্তা
মামলাকারীর আইনজীবী আশিষ কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হওয়ার পরেই তার মক্কেলকে চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ দিয়েছে, কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না সে বিষয়ে তার উত্তর তলব করে। তিনি জানান, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং রাজ্য সরকারের একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তা সত্বেও পুলিশ আধিকারির উপস্থিতিতে রোগীর পরিবার মিহিরকে মারধর করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না। আগামীকাল, বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে।