বহু সংগ্রাম করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেলেও মেলেনি চাকরি, তন্ময় এখন ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা’

বহু সংগ্রাম করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেলেও মেলেনি চাকরি, তন্ময় এখন ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা’

নওদা: এমএ পাশ করেও ঘোরেনি ভাগ্যের চাকা৷ তাই অন্যের ভাগ্য ফেরাতে লটারির দোকান খুলেছেন নওদার তন্ময়৷ রাস্তায় ধারে রাখা ছোট্ট কাঠের টেবিলের উপর থরে থরে সাজানো লটারির টিকিট৷ আর টেবিলের তিনদিকে বড় বড় করে লেখা ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা তন্ময়’৷ 

আরও পড়ুন- দেশজুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন, চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন দিলীপ

মুর্শিদাবাদের নওদার আমতলা বাজার এলাকায় লটারির দোকান তন্ময় চুনারির৷ বাড়ি নওদার সাঁকায়ো এলাকায়৷ তাঁর লটারির দোকান এখন এলাকায় সবচেয়ে বেশি চর্চিচ৷ পথ চলতি মানুষের নজর কাড়ছে তাঁর দোকানের নাম৷ তাঁকে নিয়ে বাড়ছে আগ্রহ৷ কেন এহেন নাম দিলেন তন্ময়? সে কথা নিজেই জানালেন৷ 

তাঁর কথায়, ‘অনেক কষ্টেই এই নাম দিয়েছf৷ এমএ পাশ করেও আমাকে লটারি বিক্রি করতে হচ্ছে৷’ তন্ময় তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র৷ আচমকাই বাবাকে হারান তিনি৷ বাড়িতে মা, দাদা আর বৌদি৷ টানাটানির সংসারে দু’বেলা অন্ন জোগাতে সাইকেলের দোকানে কাজ নেন কিশোর তন্ময়৷ সেই সময় একপ্রকার স্কুলছুট হয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ পরে সংসারের হাল ধরতে আমতলা বাজারে টেবিল পেতে লটারি বিক্রি শুরু করেন তাঁর দাদা জয়দেব চুনারি৷ ফের স্কুলে যেতে শুরু করেন তন্ময়৷ ২০১১ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন৷ তার পর ফের পড়াশোনা থেকে দূরে হারিয়ে যাওয়া৷ সংসার চালাতে কখনও রাজমিস্ত্রি, কখনও রংমিস্ত্রির কাজ করেছেন৷ কখনও আবার জোগাড়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন৷ কখনও অন্যের জমিতে দিনমজুরি খেটেছেন৷ এভাবে লড়াই করতে করতেই ২০১৮ সালে আমতলা যতীন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ  এবং ২০২১ সালে বাংলা নিয়ে দূরশিক্ষায় স্নাতোকত্তর পাশ করেন৷ 

এত সংগ্রামের পরও ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি৷ তন্ময় জানান, রাজ্য পুলিশের এসআই, কনস্টেবল থেকে  কেন্দ্রে সিআইএসএফ, ব্যাঙ্ক, রেল সহ একাধিক পরীক্ষায় বসেছেন৷ অনেক পরীক্ষায় প্রথম ধাপের লিখিত, শারীরিক পরীক্ষায় পাশও করেছেন৷ কিন্তু, জোটেনি চাকরি। এরই মধ্যে মারা যান তাঁর দাদা৷ সংসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এসে পড়ে তন্ময়ের কাঁধে৷ চার জনের আহার জোগাড় করার পাশাপাশি মায়ের চিকিৎসা, ভাইপোর পড়াশোনার খরচ চালাতে দাদার মতোই লটারি নিয়ে বসেন তিনি৷ তবে একটি নতুন টেবিল বানিয়েছেন তন্ময়৷ আর দোকানের নাম দিয়েছেন ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা’৷ আর এই নামেই শোরগোল পড়েছে৷ 

কিন্তু লটারি বিক্রিকেই কেন পেশা হিসাবে নিলেন তন্ময়? তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে চাকরির পিছনে ছুটি লাভ নেই৷ টিউশন করেও খরচ ওঠে না৷ দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করার পুঁজি নেই৷ আর লটারির ব্যবসা করতে গেলে পুঁজি লাগে না৷ তাই এই পেশাকেই বেছে নিয়েছি৷’’ দিনে ৪০০ টিকিট বিক্রি করতে পারলে ১৬০ টাকা কমিশন মেলে৷ দিনে আড়াইশো-তিনশো টাকা কমিশন হয়৷ তাই দিয়েই সংসার চলে৷ তার সঙ্গে চলে টুকটাক টিউশন পড়ানো৷ 

জীবন তাঁর পথে হয়তো অনেক কাটা বিছিয়ে রেখেছে৷ কিন্তু তন্ময়ও হার মানার পাত্র নয়৷ লটারির টিকিট বিক্রির পাশাপাশি পুলিশ বা সামরিক বাহিনীতে চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে চলেছেন৷ নিয়মিত ভাবে সকালে দৌড়ন তিনি। দোকানে বসেও বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে চলেন এমএ পাশ লটারিওয়ালা।