কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ৷ তাঁর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করার আবেদন৷ এই মর্মে বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী তথা বামনেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁকে হলফনামা দাখিলের পরামর্শ দিয়েছে বেঞ্চ৷ আলিপুর আদালত চত্বরের একটি অনুষ্ঠানে মমতার করা কয়েকটি ‘ব্যক্তিগত’ মতামতমূলক মন্তব্যের জেরেই এই মামলা করার অনুমতি দিল উচ্চ আদালত৷
আরও পড়ুন- সিবিআই তলবে সাড়া দিয়ে নিজাম প্যালেসে কালীঘাটের কাকু! জেরা চলছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে
বিকাশরঞ্জনের অভিযোগ, মমতা বলেছেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি এখানে নেই, আমি সুব্রতদাকে (বিচারপতি সুব্রত তালুকদার) বলব, যিনি এখানে (উপস্থিত) আছেন। এটা আমার ব্যক্তিগত মত, দয়া করে এত সহজে চাকরি কেড়ে নেবেন না।’’ হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মমতার ওই মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘‘হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এ ব্যাপারে একটি আদালত অবমাননার মামলা করুক।’’
মঙ্গলবার আলিপুর আদালত চত্বরে স্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ ঘোষের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বক্তব্যে রাখার সময় উঠে আসে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো আইনজীবীদের উপর নির্ভর করি। বিচারপতিদের রায়কে সম্মান জানাই। আমি অধিকার কাড়ার পক্ষে নই। আমি অধিকার দেওয়ার পক্ষে। যেটা আইনত স্বীকৃত, সেই অধিকারের কথা বলছি।’’
গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু কিছু অংশ নিয়েই অভিযোগ জানান বিকাশরঞ্জন৷ গতকাল মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি যদি অন্যায় করি, আপনারা গালে দুটো চড় মারুন। আমি কিচ্ছু মনে করব না। ক্ষমতায় আসার পর আমরা একটাও সিপিএম ক্যাডারের চাকরি খাইনি৷ তাহলে তোমরা কেন খাচ্ছ? দেওয়ার ক্ষমতা নেই, নেওয়ার ক্ষমতা আছে৷ কথায় কথায় হাজার হাজার চাকরি বাদ দেওয়া হচ্ছে৷ কেউ কেউ ভুল করে থাকতে পারে৷ তবে তাঁরা সকলে তৃণমূল বা সরকারের ক্যাডার নয়৷ সরকারের ক্যাডাররাও কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক৷ যে অন্যায় করবে তাঁর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেব৷’’
সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘এর পরেও ভেবে দেখতে বলব৷ গতকালও দু’জন আত্মহত্যা করেছে৷ কারও ভুলের মাশুল তাঁরা গুণবে কেন? চাকরি করে বলে একটা ছেলে বা মেয়ে তাঁর পরিবারকে দেখতে পারছে৷ তাঁরা বিয়ে করে সংসার করছে৷ হঠাৎ করে চাকরি চলে গেলে তাঁরা খাবে কী? যাঁরা ভুল করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করুন৷ তাঁদের প্রতি আমার কোনও সহমর্মিতা নেই৷ কিন্তু, ছেলেমেয়েগুলোকে যেন ফল ভুগতে না হয়৷ আইন অনুযায়ী তাঁদের চাকরিটা ফিরিয়ে দেন৷ তাঁদের আবার সুযোগ দেওয়া হোক৷ প্রয়োজনে ফের পরীক্ষা দিক৷ কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না৷’’
এর পরেই ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের উদ্দেশ মমতা বলেন, ‘‘আমি সুব্রতদাকে বলব, যিনি এখানে আছেন। এটা আমার ব্যক্তিগত মত, দয়া করে এত সহজে চাকরি কেড়ে নেবেন না।’’ এই মন্তব্যকে সামনে রেখেই আদালত অবমাননার মামলা করার আর্জি জানান বিকাশ।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>