কলকাতা: অবৈধভাবে কয়লা মজুত ঠেকাতে পুলিশি অভিযান৷ গ্রামবাসীরা বাধা দিলে বাধে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ৷ পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি৷ পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ৷ চার-পাঁচজন গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় বীরভূমের খয়রাশোলের নওপাড়ায়৷
আরও পড়ুন- তর্ক-বিতর্কের মাঝেই পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান নিয়ে মুখ খুললেন বুদ্ধদেব
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া লোকপুর থানা এলাকার নওপাড়া গ্রামে অবৈধ ভাবে কয়লা মজুত করার অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন ধরেই৷ ঝাড়খণ্ড থেকে চোরাপথে কয়লা এনে মজুত করা হত এই গ্রামে৷ শুক্রবার নওপাড়ায় অভিযানে নামে পুলিশ৷ অবৈধ কয়লা বাজেয়াপ্ত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় গ্রামবাসীদের। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে এই সংঘর্ষ। এই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন চার-পাঁচ জন গ্রামবাসী৷ অন্যদিকে, অবৈধ কারবারিদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন বেশ কিছু পুলিশ কর্মী৷ ভেঙে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়ির কাঁচ৷ আহত পুলিশ কর্মীদের স্থানীয় নাকরাকোন্দা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
ঠিক কি অভিযোগ রয়েছে এই গ্রামে? জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেও নওপাড়া গ্রামে কয়লার চোরাকারবারিদের আনাগোনা বাড়ছিল৷ গোপন সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, দীর্ঘ দিন ধরে এই গ্রামের বেশ কয়েকজন চোরাকারবারি ঝাড়খণ্ড থেকে কয়লা নিয়ে এসে এখানে মজুত করছিল৷ তারপর এখান থেকে সেই কয়লা রাজ্যের একাধিক জায়গায় পাচার করা হত। এছাড়াও পাওয়ার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড-এর গঙ্গারামপুর চক এবং কৃষ্ণপুর বড়জোর খোলামুখ কয়লা প্রকল্প থেকেও নিয়মিত কিছু দুষ্কৃতী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কয়লা চুরি করে মজুত করছিল এই গ্রামেই৷ এর পর রাতের অন্ধকারে তা পাচার করা হচ্ছিল বিভিন্ন প্রান্তে৷ এই অভিযোগের ভিত্তিতেই শুক্রবার দুপুরে আচমকা নওপাড়া গ্রামে হানা দেয় পুলিশ। বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছয় নওপাড়ায়৷
শুক্রবার দুপুরে গ্রামে পৌঁছনোর পর একটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ এর পর অবৈধভাবে কয়লা মজুত করার অভিযোগে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে আটক করতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে গ্রামাবসীরা। পুলিশ কয়লা সরানোর কাজে হাত লাগাতেই তেড়ে আসে গ্রামের লোকজন। শুরু হয় গোলাগুলি-ইটবৃষ্টি। বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘বেআইনিভাবে মজুত করা কয়লা উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে৷ কয়েকজন পুলিশকর্মীর আঘাত লেগেছে৷ বেশ কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
অন্যদিকে গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর পাল্টা অভিযোগ আনা হয়েছে৷ ৪-৫ জন গ্রামাবসী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ দিকে, পুলিশের দাবি, গ্রামবাসীদের আক্রমণে দু’জন ওসি সহ একাধিক পুলিশকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে কার্যত রণক্ষেত্রে হয়ে ওঠে গোটা গ্রাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে অধিক পুলিশ বাহিনী পাঠানো হচ্ছে নওপাড়ায়।