কলকাতা: তারা জিতুক বা হারুক, ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু থেকে হারিয়ে যাবে না বিজেপি৷ কংগ্রেস যে ভাবে রাজনীতিতে আছে, তেমনই বিজেপি’ও থাকবে৷ তাদের হারা বা জেতাটা হবে কংগ্রেসের প্রথম ৪০ বছরের মতো৷ যাদের কাছে জাতীয় স্তরে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট রয়েছে, সেই দল রাতারাতি উবে যেতে পারে না৷ এত তাড়াতাড়ি বিজেপি হারিয়ে যাবে না৷ মানুষ ক্ষুব্ধ, প্রবল আক্রোশে মোদী সরকারকে ছুড়ে ফেলে দেবেন, এই ভ্রান্তিতে থাকবেন না৷ হয়তো তাঁরা মোদীকে সরাবেন৷ কিন্তু বিজেপি হারিয়ে যাবে না৷ আরও কয়েক দশক লড়াই করবে বিজেপি৷ এখানে তাড়াহুড়োর কোনও প্রশ্নই নেই৷ রাহুল গান্ধীর চিন্তা ভাবনাতে হয়তো সমস্যা হচ্ছে৷ উনি হয়তো ভাবছেন মানুষ কিছু দিনের মধ্যেই বিজেপি’কে ছুড়ে ফেলে দেবে৷ এমনটা হবে না৷
আরও পড়ুন- রোহিঙ্গাদের সাহায্য করছে মমতার সরকার! অনুপ্রবেশ নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ
প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোট কুশলীর এহেন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ তাঁর দাবি, বিজেপি এত তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাবে না৷ কিন্তু বিজেপি’কে হারাতে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমেছে তৃণমূল৷ মিশন দিল্লির লক্ষ্যে তাঁদের নিশানায় এসেছে কংগ্রেসও৷ বেছে বেছে কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে, কংগ্রেসের নীতির বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়েছে৷ কংগ্রেসকে চূর্ণ করেই কি জাতীয় রাজনীতিতে তাদের জায়গায় নিজেদের আসন পাকা করতে চাইছে তৃণমূল? আর জায়গা দখলের এই লড়াইয়ে ফায়দা লুটছে বিজেপি৷ এতে কি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে না গেরুয়া শিবির? এদিকে, প্রশান্তের মন্তব্যে বিজেপি’র সঙ্গে পিকে’র গোপন আঁতাত দেখছেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী৷ তাঁর আশঙ্কা কি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায়?
এদিন প্রশান্ত কিশোরকে কটাক্ষ করে লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা তথা সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘আঁতাত করে বিজেপি’র হাত শক্ত করার চেষ্টা চলছে৷ প্রশান্ত কিশোরের আজকের মন্তব্য থেকে একটা বিষয় প্রতীয়মান যে, বিজেপি ভারতবর্ষে আবার ক্ষমতায় আসবে৷ রাহুল গান্ধী কোনও দিনই বলেননি যে বিজেপি’কে আমরা ভারতবর্ষ থেকে সরিয়ে দিতে চাই৷’ তিনি আরও বলেন, ‘২০ অগাস্ট যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠক করলেন, আজ সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে হচ্ছে কংগ্রেসকে দিয়ে হবে না৷ কিন্তু কেন? কারণ এর পিছনে রয়েছে প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোটের কারবারিরা৷ যারা ২০১৪ সালে বিজেপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন করেছিল, মোদীর হয়ে প্রচারের দায়িত্ব সামলেছিল৷ তাই নতুন করে প্রশান্ত কিশোর গোপনে বিজেপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁদের ক্ষমতার আনার ব্যবস্থা করছেন কিনা, সেই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে আমার মধ্যে৷’
অন্যদিকে প্রশান্ত কিশোরের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, ‘প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের কেউ নন৷ উনি আইপ্যাক নামে একটি সংস্থার প্রধান৷ উনি তৃণমূলের উপদেষ্টা৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে ওঁর পরামর্শ ও কৌশলে দল উপকৃত হয়েছিল৷ ওঁর স্বাধীন মতামত থাকতেই পারে৷ ওঁর কথায় এখনও মোদীর জনপ্রিয়তা আছে৷ প্রশান্ত কিশোরের মতামত ব্যক্তিগত৷ এটা রাজনীতির শেষ কথা হিসাবে নেওয়া উচিত নয়৷ মোদীর বিরুদ্ধে অনেকেই লড়ছে৷ প্রত্যেকটি দলকেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে৷ কংগ্রেসকেও করতে হবে৷
অন্যদিকে, প্রশান্ত কিশোরের প্রতি সমর্থনের সুর রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের গলায়৷ তিনি বলেন, এটা স্বাভাবিক বিষয়৷ এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে পৃথিবীতে খুব কম লোক আছে৷ ভারতবর্ষে তো কেউ নেইই৷ কারও কারও মনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ জাগতে পারে৷ উচ্চাকাঙ্খা থাকাটা খারাপ নয়৷ কিন্তু বাংলাতে একটি প্রবাদবাক্যও রয়েছে৷ ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন৷ পিকে বুদ্ধিমান মানুষ৷ উনি হয়তো জনগণের পালস বুঝেই এ কথা বলছেন৷ আগামী ১০ বছর ভারতবর্ষে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকারই ক্ষমতায় থাকবে৷
আবার সুজন চক্রবর্তী বলেন, প্রশান্ত কিশোরের মন্তব্য একান্তই তাঁর৷ তবে এটা ঠিক বলে আমি মনে করি না৷ মানুষ অপেক্ষায় আছে৷