তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপিকে জবাব, মমতায় আস্থা ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ গুরুংয়ের

তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপিকে জবাব, মমতায় আস্থা ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ গুরুংয়ের

 

কলকাতা: তিন বছর পর পঞ্চমীর বিকেলে সকলকে চমক দিয়েই সল্টলেকের গোর্খা ভবনের সামনে উপস্থিত হন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমন গুরুং৷ এদিন সকাল থেকেই রাজনৈতিক মহলে বিমল গুরুংকে নিয়ে চলছিল জল্পনা৷ এদিন গোর্খা ভবনে ঢোকা নিয়ে বিস্তর নাটকের পর সাংবাদিক বৈঠক করলেন তিনি৷ ঘটে গেল রাজনৈতিক পালাবদল৷ ১০০ ডিগ্রি অবস্থান বদল করলেন এই মোর্চা নেতা৷ যে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতের জেরে দার্জিলিং ছেড়েছিল, সেই তৃণমূলের সঙ্গেই গাঁটছড়া বেঁধে ২১-এর ভোটে লড়ার কথা ঘোষণা করলেন দেশদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত এই গোর্খা নেতা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিলেন দরাজ সার্টিফিটেক৷  

আরও পড়ুন- স্বামীর আশ্রয় পেতে শ্বশুরবাড়িতে ধর্না নববধূর, দেবীপক্ষে বধূর কান্না!

 

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে গুরুং বলেন, দলের ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও গত ছয় বছরে নিজেদের কথা রাখেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর সমাধান হয়নি৷ তাই যাঁরা গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে প্রাধান্য দেবে, তাদেরকেই সমর্থন করব৷ তিনি বলেন, ছয় বছর হয়ে গেল গোখ্যাল্যান্ডের জন্য কিছু করেনি বিজেপি৷ কথা রাখেননি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ৷ তাই পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুলেই যোগ দিতে চান তিনি৷ তবে কোনও ভাবেই তাঁর দল যে গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে সরে আসবে না, সে কথাও বার বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷

গুরুং বলেন, আমি তিন বছর হল এক অন্য জীবন কাটিয়েছি৷ সেই সময় আমি দেখেছি বাংলায় কী আছে আর কেন্দ্রে কী আছে৷ প্রধানমন্ত্রী হোক বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তাঁরা আজ পর্যন্ত পূরণ করেনি৷ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে যে দলকে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পালন করেছেন৷  এই জন্য গর্বের সঙ্গে বলছি, এই মুহূর্ত থেকে আমি বিজেপি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই৷ আমাদের যে সম্পর্ক ছিল তা শেষ করতে চাই৷ ২০২১-এর আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেই এই বঞ্চনার জবাব দিতে চাই বিজেপিকে৷ উত্তরবঙ্গে যতগুলি আসল রয়েছে, সবকটি আসনের জন্য লড়াই করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি৷ তাঁর কথায়, তৃতীয়বারের জন্যও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মুখ্যমন্ত্রীর আসনে দেখতে চাই৷ তিন বছর বাইরে বসে দেখেছি উনি অনন্য৷ উনি সকলের আইডল৷ উনি যা বলেন তাই করেন৷ পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সের উন্নতির জন্য তাঁর সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে চাই৷

আরও পড়ুন- BIG BREAKING: খাস কলকাতায় বিমল গুরুং, যাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল বাংলার পুলিশ!

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গুরুং বলেন, রাজনীতিতে কোনও শত্রুও হনা, বন্ধুও হয় না৷ নিজের দাবি পূরণের জন্য কাল পর্যন্ত বিজেপি’র সঙ্গে ছিলাম৷ কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ হয়নি৷ তাই আমরা আর বিজেপি’র সঙ্গে থাকব না৷ ‘‘আমি অপরাধী নই৷ দেশদ্রোহী নই৷ আমি একজন রাজনৈতিক নেতা৷ নিজর দলের জন্য নিজের জাতির জন্য তিন বছর পর সবার সামনে এসেছি৷’’ গত চিন বছর ধরে ফেরার ছিলেন গুরুং৷ এদিন তিনি জানান, এতদিন দিল্লিতে ছিলেন তিনি৷ গত দু’মাস ছিলেন ঝাড়খণ্ডে৷ গুরুং বলেন, আজ যদি আমাকে গ্রেফতার করা হয়৷ তাহলে আমি জেলে যেতেও প্রস্তুত৷

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গুরুংয়ের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১২০টির বেশি মামলায় রয়েছে৷ কোনটায় কী ধারা, কী অভিযোগ? তা আগেই জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ৷ গুরংকে নিয়ে সেই মামলাগুলি এখনও চলছে৷ ২০১৭ সালে জুনে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে আগুন জ্বালানোর পর থেকে পুলিশের খাতায় ফেরার ছিলেন গুরং৷ তারপর থেকে বিমল গুরুং ছিলেন বেপাত্তা৷ পরে চলতি বছর মার্চ মাসে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ছেলের বিয়ের ভোজসভায় দেখা গিয়েছিল গুরুংকে৷ নবদম্পতির সঙ্গে বিমল-রোশনের ছবি ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক৷

কিন্তু, ২০১৭ সালের জুনে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি পাহাড়ে আগুন জ্বালানো, টানা ১০৫ দিন ধরে পাহাড় অচল করে দেওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের উপরে হামলার মতো ঘটনার পর দায়ের হওয়া খুন, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর-সহ একাধিক ধারায় মামলার পরও কীভাবে খাস শহর কলকাতায় ঘুরে বেরালেন গুরুং? রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২০১৭ সাল থেকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছিল বিমল গুরংকে৷ পাহাড় থেকে জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে গুরুংয়ের টিকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ৷ গুরংয়ের সন্ধান পেতে ভিন্ রাজ্যে ছুটেও লাভ হয়নি৷ দীর্ঘ ‘চোর-পুলিশে’র পর পঞ্চমীর সন্ধায় আচমকা কলকাতায় গুরংয়ের উপস্থিতির পর কোনও পদক্ষেপ নিল না পুলিশ? পুলিশ খুনের মামলাতেও কেন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া গেল না? পুলিশ কি সব জেনেও নিস্ক্রিয় থাকল? তৃণমূলের সঙ্গে জোটবার্তা দেওয়ার কারণেই কি পার পেয়ে গেলেন রাষ্ট্রদ্রোহ-সহ ১০৫টি মামলায় যুক্ত থাকা বিলম গুরুং? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চান বলেই কি গুরুংয়ের বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ নিল না? যাঁকে এতদিন হন্যে হয়ে খুঁজছিল বাংলার পুলিশ, সেই পুলিশের নাকের নাকের ডগায় খাস কলকাতায় কীভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে গেলেন বাংলাকে ভাগ করতে চাওয়া গুরুং? ২১-এর নির্বাচনের কথা ভেবে কি গুরুংয়ের হাতে হাত মিলিয়ে বাংলা ভাগের পক্ষে মত দেবে তৃণমূল? পুজোর মধ্যে গুরুয়ের তৃণমূল সংখ্যতা নতুন করে বাড়িয়েছে বিতর্ক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *