কলকাতা: বিজেপির নবান্ন অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে খুলে গিয়েছিল শিখ সম্প্রদায়ের এক যুবকের পাগড়ি৷ অভিযোগ, ইচ্ছে করেই তাঁর পাগড়ি টেনে খুলে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোরাল হতে শুরু করেছে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার তত্ত্ব৷ তবে রবিবার যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে স্বরাষ্ট্র দফতরের পাল্টা দাবি, একটি রাজনৈতিক দল ইচ্ছা করেই ৮ অক্টোবরের ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং লাগানোর চেষ্টা করছে৷
আরও পড়ুন- দ্বিতীয় প্লাজমা থেরাপির পর কেমন আছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়?
গত বৃহস্পতিবার বিজেপির ‘নবান্ন চলো’ অভিযান থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত৷ ওই দিন বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ধস্তাধস্তি হয়৷ ওই দিন সন্ধ্যা থেকে একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়৷ ওই ভিডিয়োতে দেখা যায়, এক শিখ যুবককে আটক করছে পুলিশ। তখন টানাহ্যাঁচড়ায় তাঁর পাগড়িটি খুলে যাচ্ছে। সেই পাগড়ি খোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই চড়তে থাকে বিতর্কের পারদ৷ ময়দানে নামেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং৷ ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেন প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং এবং শিখ কমিউনিটির সদস্যরা৷ তাঁরা বলেন, বলবিন্দর সিং-এর সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা শিখ সম্প্রদায়ের অপমান৷ এর পরেই স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে টুইট করে বলা হয়, ‘‘আমাদের শিখ ভাই-বোনেরা পশ্চিমবঙ্গে শান্তি এবং সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করেন৷ তাঁদের সকলের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে৷ সাম্প্রতিক এক ঘটনায় জনৈক ব্যক্তিকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ এই ঘটনাকে বিকৃত করে সাম্প্রদায়িক রং লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷’’ আরও একটি টুইটে বলা হয়, ‘‘সংকীর্ণ স্বার্থের জন্য একটি রাজনৈতিক দল এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং লাগাচ্ছে৷’’
অন্যদিকে, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কোনও সম্প্রদায়কে নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। এই রাজনীতি বাংলায় চলে না। আমরাও অনেক আন্দোলন করেছি। আমার নামেও অনেক মামলা ছিল। কিন্তু কোনও দিন ধর্মের কথা ভাবিনি। মিছিলে পিস্তল নিয়ে এলে পুলিশ তো ধরবেই। এর সঙ্গে ধর্মকে জুড়ে দেওয়া মানে পাপ।”
আরও পড়ুন- ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায়, ২৫০ বছরের ঘটকবাড়ির দুর্গাপুজো আজও অমলিন
অন্যদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে মুখ খোলেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়৷ তিনি বলেন, বাংলা থেকে আল-কায়দা জঙ্গি গ্রেফতার থেকে শিখ সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পাগড়ি খোলা নিয়ে বিতর্ক, আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বাংলার পরিস্থিতি দেখাচ্ছে৷ অবিলম্বে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া উচিত৷ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাংলায় বিরোধী দলের উপর অত্যাচার চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ উনি নিশ্চয় ওঁনার তৃণমূল পর্যায়ের সংগ্রামকে ভুলে গিয়েছেন৷’’ তাঁর কথায়, সুপরিকল্পিত ভাবেই শিখ সম্প্রদায়ের ওই ব্যক্তিকে একক ভাবে টার্গেট করা হয়েছে৷ তাঁর পাগড়ি খুলে তাঁকে অপমান করেছে রাজ্য পুলিশ৷
আবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি এবং রাজভবন শান্তিপূর্ণ বাংলায় ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তি ছড়াতে চাইছে৷ শিখ সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে নোংরা রাজনীতি খেলছে ওঁরা৷ আমরা শিখ সম্প্রদায়কে শ্রদ্ধা করি৷ আগুন নিয়ে খেলতে চাইছেন রাজ্যপাল৷’’