কলকাতা: সুদূর বাংলাদেশের ফরিদপুরের বিঝারি গ্রামে প্রায় আড়াইশ বছর আগে বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন ঘটক পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। বাংলাদেশ থেকেই এই পরিবারের পুজোর ঐতিহ্য শুরু। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে এপার বাংলায় এসে তারা কলকাতায় বাস করতে শুরু করেন। সেখানেও প্রথম থেকেই শুরু হয় দুর্গাপূজা। টানা আড়াইশ বছরে কখনো ছেদ পড়েনি পুজোয়। শাক্ত মতে সমস্ত আচার অনুষ্ঠান মেনে প্রতিবছর পুজো হয় ঘটক পরিবারে।
এখনও নিয়ম মেনে পুজোর তিন দিনই বলি হয় মহামায়ার সামনে। নিজের হাতে সেই বলি দেন পরিবারেরই কোনো সদস্য। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মা দুর্গার বামে থাকেন গণেশ আর কার্তিক থাকেন কলা বউয়ের পাশে মায়ের ডান দিকে। তন্ত্রমতে শাক্ত আরাধনা হয় দেবীর। এই পরিবার বাংলাদেশে সংস্কৃত পণ্ডিত পরিবার হিসাবে পরিচিত ছিল। পরে তারা ঘটক উপাধি পান।
পরিবারের পূর্বপুরুষ বিধুভূষণ ঘটক ছিলেন মা সারদার প্রত্যক্ষ শিষ্য। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে যান মা সারদা। উদ্বোধন প্রকাশিত মা সারদার শিষ্যের তালিকায় বিধুভূষণ ঘটকের নাম রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ঘটকরা চলে আসেন কলকাতায়। গত ৭০ বছর ধরে এপার বাঙলায় চলে আসছে এই পারিবারিক পুজো। এখনও যাদবপুরে পরিবারের রামগড়ের ঠাকুরদালানে আড়ম্বরের সঙ্গে পুজো হয়ে আসছে।
বর্তমান প্রজন্মের পুজোর অন্যতম আয়োজক প্রসেনজিৎ ঘটক জানালেন পুজোর ক’দিন দূর দূর থেকে এমন কি দেশের বিভিন্ন শহর ও বিদেশ থেকেও পরিবারের সদস্যরা এসে হাজির হন রামগড়ের বাড়িতে। সকলেই মেতে ওঠেন আনন্দময়ীর উৎসবে। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় আজও পুজোর আয়োজনে অর্থাভাব ঘটেনি কখনও। পুজোর কটা দিন অতিথি অভ্যাগতদের ভিড়ে গমগম করে বাড়ি। যারা প্রতিমা দর্শনে আসেন সকলেই ভোগ পান। প্রতিদিন দুবেলা দুই থেকে আড়াইশ জনের ভোগ রান্না হয় বাড়িতে।
মা দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয় আমিষ ভোগ। তিনদিনই মায়ের মাছের পদ অপরিহার্য। এমনই নানা বিশেষত্বে অভিনব ঘটক বাড়ির পুজো। প্রসেনজিৎ জানান পরিবারের আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পুজো শুরু করেছিলেন বর্তমান প্রজন্মের প্রপিতামহের প্রপিতামহ। সে সময়কার তালপাতার পুঁথি ও ভুর্জপত্র এবং তালপাতাতেই লেখা চন্ডী আজও যত্নে রয়েছে এই বাড়িতে।
এই পুজোর কূলপুরোহিত বংশপরম্পরায় মেদিনীপুরের নিকুশিনীর ভট্টাচার্য পরিবার| পুজোর ক’দিন বাড়ির যাবতীয় ভোগ রান্না করে আসছেন পরিবারের মহিলারাই। বছর বছর একই মৃৎশিল্পী পরিবার গড়ে আসছেন একচালা প্রতিমা। ঐতিহ্য এবং আন্তরিকতার মিশেলে প্রতিবছর মাতৃ আরাধনা সার্থক হয়ে ওঠে ঘটকবাড়িতে।